কলকাতা: আহমদপুর–কাটোয়া (Ahmadpur Katwa) রেলপথে ট্রেনসংখ্যা বৃদ্ধি, যাত্রীসুবিধার উন্নতি এবং দীর্ঘদিনের অবহেলিত পরিষেবা পুনর্বিবেচনার দাবিতে মঙ্গলবার বোলপুর শান্তিনিকেতন সফর করলেন আহমদপুর–কাটোয়া রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা। রতনপল্লীর একটি গেস্টহাউসে তাঁদের বৈঠক হয় মধ্যপ্রদেশের রাজ্যসভার সাংসদ সুমিত্রা বাল্মিকের সঙ্গে। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি ধরে চলা এই আলোচনায় রেলপথ সংক্রান্ত একাধিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন যাত্রী সংগঠনের সদস্যরা।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাহুল মন্ডল, সুবীর সেন, সৌভিক মন্ডল, সদানন্দ দত্ত, বাপি মন্ডল ও অশোক ঘোষ প্রমুখ। তাঁরা সাংসদের হাতে একটি বিস্তারিত দাবিপত্র তুলে দেন, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে—এই রুটে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনসংখ্যা কম থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী সমস্যায় পড়েন। বিশেষ করে স্কুল–কলেজ পড়ুয়া, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত অন্যত্র যাতায়াত করতে হয়। পর্যাপ্ত ট্রেন না থাকায় তাঁদেরকে বাস কিংবা ভাড়ার গাড়ির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
দাবিপত্রে উল্লেখ করা প্রধান কয়েকটি বিষয় হচ্ছে—
১️⃣ আহমদপুর–কাটোয়া রুটে সরাসরি কলকাতাগামী ট্রেন চালু করা
২️⃣ সকালে অফিস–টাইমে এবং রাতে উপযোগী সময়ে ট্রেন সংযোজন
৩️⃣ মেইন লাইন ট্রেনের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো
৪️⃣ স্টেশনগুলিতে ব্যাসিক সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো (পানীয় জল, টিকিট কাউন্টার, সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট, নিরাপত্তা)
৫️⃣ রেললাইনে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বাড়িয়ে ট্রেনের গতিবেগ ও নির্ভরযোগ্যতা উন্নয়ন
সাংসদ সুমিত্রা বাল্মিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাঁদের উদ্বেগের বিষয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, যাত্রীদের সমস্যার কথা তিনি নিজেও জানেন এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। সাংসদ আশ্বাস দিয়ে বলেন—
“দাবিপত্রটি আমি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠাব। পাশাপাশি নিজেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা রিসিভড কপিটি পেয়ে যাবেন।”
এছাড়া তিনি যাত্রী সংগঠনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গণপরিবহনের উন্নয়নে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ নিজের সমস্যা নিজেরাই সামনে না আনলে নীতি–নির্ধারকদের পক্ষে তা জানা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
যাত্রী সংগঠনের তরফে রাহুল মন্ডল জানান—
“এই রুটে যাতায়াতকারীদের সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ট্রেন বৃদ্ধি হলে শুধু দৈনন্দিন যাতায়াতই নয়, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বড় সুবিধা হবে।”
স্থানীয় যাত্রীদের মতে, আহমদপুর–কাটোয়া রুট বহু বছর ধরে অবহেলার শিকার। একসময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ হিসেবে বিবেচিত হলেও ধীরে ধীরে কমতে থাকে ট্রেনের সংখ্যা। বর্তমানে খুব সীমিত সংখ্যক ট্রেন চলাচল করে, যার ফলে প্রতিদিনই যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের দাবি—নতুন ইলেকট্রিফিকেশন ও ট্র্যাক আপগ্রেডিংয়ের পরেও যদি বেশি ট্রেন চালানো না হয়, তাহলে রেললাইনের প্রকৃত সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
এই রুটের যাত্রীসুবিধা উন্নয়নে সংগঠনটি গত কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে। কখনো স্টেশন মাস্টারের কাছে স্মারকলিপি, কখনো ডিভিশনাল রেল ম্যানেজারের কাছে আবেদন, কখনো জনজাগরণ—সবই করা হয়েছে। তবে এবার সাংসদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে যাত্রীদের আশা বেড়েছে বাস্তবসম্মত পরিবর্তনের দিকে।
বোলপুর সফর শেষে সংগঠনের সদস্যরা জানান—
“আজকের বৈঠক আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, সাংসদ মহাশয়ার হস্তক্ষেপে বিষয়টি এবার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গুরুত্ব পাবে।”
স্থানীয় মানুষদের মতে, এই উদ্যোগ সফল হলে ওই রুটের হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যেতে পারে। ট্রেন সংখ্যা বাড়লে যাতায়াত সহজ হবে, অর্থনীতি চাঙা হবে এবং মানুষের কাজের সুযোগও বাড়বে।
