নদিয়া: রাজ্যে নির্বাচনী তালিকা সংশোধনের আগে ফের চাঞ্চল্যকর ঘটনা। নদিয়ার কল্যাণী এলাকায় উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২৫০টি ভোটার (voter card) পরিচয়পত্র। ওই বিপুল সংখ্যক ভোটার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র তরজা।
সূত্র অনুযায়ী, ধৃত ব্যক্তির দাবি, তিনি হুগলির হিন্দমোটর এলাকার বাসিন্দা এবং কল্যাণীতে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে আসে, তাঁর কাছে প্রচুর ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। সন্দেহজনক আচরণ দেখে তাঁকে আটকে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
জেরায় ধৃত ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি রাস্তায় ঝোপের মধ্যে ওই ভোটার কার্ডগুলি পড়ে থাকতে দেখেন এবং সেগুলি সংগ্রহ করে নিজের কাছে রাখেন। তবে পুলিশের কাছে এই দাবি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। এখন তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, কারা এই ভোটার কার্ডগুলি এখানে ফেলে গেল এবং এদের মাধ্যমে কোনও বড় চক্র কাজ করছে কি না।
ঘটনার পর রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন দফতর (CEO, West Bengal) নদিয়ার জেলা শাসকের (DM) কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, “এই ধরনের ঘটনা বিশেষ ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়ার (SIR) আগে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কমিশন সমস্ত জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।”
উল্লেখ্য, নভেম্বর মাস থেকেই সারাদেশে শুরু হতে চলেছে নির্বাচনী তালিকার বিশেষ পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া। প্রথম ধাপে এই প্রক্রিয়া চালু হবে দশটি রাজ্যে—যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল, অসম এবং পুদুচেরি অন্যতম। কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭.৬ কোটি।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধীরা সরব হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন এক পরিহাস। বুথ দখল, ভোট লুট এখন সাধারণ ব্যাপার। তৃণমূল সরকার থাকলে ভোটে কোনও স্বচ্ছতা সম্ভব নয়।”
অন্যদিকে, তৃণমূল সূত্রে পাল্টা দাবি করা হয়েছে যে বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিত করছে। দলীয় এক নেতা বলেন, “তদন্তের আগে এমন অভিযোগ দায়িত্বজ্ঞানহীন। পুলিশ ও প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ভোটার আইডি কার্ডগুলি আসল না নকল, তা যাচাই করার জন্য নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এই ভোটার কার্ডগুলি কোনও নির্দিষ্ট এলাকার কি না এবং এর পেছনে প্রশাসনিক ত্রুটি বা অপরাধমূলক উদ্দেশ্য রয়েছে কি না।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত অন্য কেউ আছে কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে। নির্বাচন কমিশন চায়, আসন্ন ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়ার আগে সমস্ত সন্দেহজনক দিক স্পষ্ট হয়ে যাক, যাতে কোনওভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা না পড়ে।



