দেশের জন্য না ভেবে তৃণমূলকে রাজ্য চালানোর পরামর্শ সৌমিত্রর

বিজেপি সাংসদ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুরের প্রতিনিধি সৌমিত্র খান (Soumitra) তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে…

Soumitra suggestion to Trinamool

বিজেপি সাংসদ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুরের প্রতিনিধি সৌমিত্র খান (Soumitra) তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একজন মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন বাংলায় তৃণমূল বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপর অত্যাচার চলছে।

কিন্তু তারা এখানে এসে বলে যে এখানে গণতন্ত্র নেই। আমাদের ২৫০ জন দলীয় কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের প্রথমে বাংলার কথা ভাবা উচিত, তারপর দেশের কথা ভাবা উচিত।” তিনি তৃণমূল সরকারকে রাজ্য পরিচালনার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, দেশের জন্য দুশ্চিন্তা করার আগে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দিকে নজর দেওয়া উচিত।

   

২০২৪ সালের ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একজন ৩১ বছর বয়সী মহিলা পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে, যা দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ঘটনার পর কলকাতা পুলিশের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে এই অপরাধের সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়।

কিন্তু কলকাতা পুলিশের তদন্তে আস্থার অভাব থাকায় কলকাতা হাইকোর্ট মামলাটি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)-এর হাতে তুলে দেয়। এই ঘটনায় সৌমিত্র খান তৃণমূল সরকারের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই ধরনের জঘন্য অপরাধ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতার প্রমাণ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।”সৌমিত্র খান আরও অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী দলের কর্মীদের উপর নিয়মিত অত্যাচার চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিজেপির ২৫০ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, এবং এই হিংসার জন্য তৃণমূল সরকারই দায়ী।

তিনি বলেন, “তৃণমূলের গুন্ডারা বিরোধী দলের কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে, তাদের ভয় দেখাচ্ছে। এটা কোনও গণতন্ত্র নয়।” তিনি আরও বলেন, আর জি কর হাসপাতালে যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, তা তৃণমূলের ‘গুন্ডা’দের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতারা, এবং এই ঘটনা তদন্তে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।

আর জি কর ঘটনার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি ইউনিট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে ভেঙে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।”

সৌমিত্র খানও এই দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, “তৃণমূল সরকারের অধীনে বাংলায় নারী ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিপন্ন। এই সরকারের কোনও নৈতিক অধিকার নেই ক্ষমতায় থাকার।” তিনি আরও বলেন, কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ব্যর্থতার জন্য তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।

Advertisements

তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের মতে “বিজেপি এবং বামপন্থীরা এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তদন্ত সিবিআই-এর হাতে রয়েছে, এবং সুপ্রিম কোর্ট এটি তদারকি করছে।”

তৃণমূলের আরেক সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, “আমাদের দলের বিরুদ্ধে প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।” তৃণমূল সরকার ৩ সেপ্টেম্বর ‘অপরাজিতা মহিলা ও শিশু বিল’ পাশ করে ধর্ষণ এবং শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছে, যা তারা তাদের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছে।

আর জি কর ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছে। জুনিয়র ডাক্তাররা ৪২ দিন ধরে ধর্মঘট করেছেন, হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে। ১৪ আগস্ট রাতে ‘রিক্লেইম দ্য নাইট’ প্রতিবাদে হাজার হাজার মহিলা বাংলার রাস্তায় নেমেছেন।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন প্রতিবাদে সুকান্ত মজুমদার, সুভেন্দু অধিকারী এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। সৌমিত্র খান বলেন, “এই প্রতিবাদ শুধু বিজেপির নয়, এটি জনগণের ক্ষোভের প্রতিফলন।”

দু’জনের নাম বাংলায় বাদ দিয়ে দেখাক, বাকীটা বুঝে নেব’, হুঙ্কার অভিষেকের

সৌমিত্র খানের এই বক্তব্য তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির তীব্র সমালোচনার অংশ। তিনি রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং রাজনৈতিক হিংসার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছেন। আর জি কর ঘটনা এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেও, এই ঘটনা বাংলার আইনশৃঙ্খলা এবং নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।