এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে আলুর (Potato) দাম আকাশছোঁয়া (skyrocketing) । গত কয়েক মাসে আলুর দাম (price) ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। একদিকে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য সরকার নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে সেই নিয়ন্ত্রণ ভেঙে যাচ্ছে চোরা পথে ( illegal) আলু (Potato) পাচারের (Smuggling) কারণে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আলু রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও পাচারকারীরা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে আলু বিক্রির জন্য অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে, বোরো থানার পুলিশ এক অভিনব অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণে আলু পাচারের সঙ্গে যুক্ত তিনটি লরি আটক করেছে এবং পাচার চক্রের সাতজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
বোরো থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিকালে বোরো বিডিও অফিসের কাছে একটি নাকা পয়েন্টে চেকিং চালানোর সময় তিনটি লরি আটক করা হয়। ওই লরিগুলির মধ্যে ছিল বিপুল পরিমাণে আলু, যা বেআইনিভাবে ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) রাজ্যে পাচার করা হচ্ছিল। লরি তিনটি মানবাজার বান্দোয়ান রাস্তা দিয়ে আসছিল এবং তা আটক করার পর, পুলিশ চালকদের কাছ থেকে বৈধ কাগজপত্রের সন্ধান চায়। চালকদের অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে সন্দেহের বশে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। এরপরই পুলিশ জানতে পারে, এই আলুগুলো ঝাড়খণ্ডে পাচার করা হচ্ছিল। পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনটি গাড়ির চালক এবং তাদের খালাসিকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরই আবারও রাজ্যের বাজারে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, তারা এই অবৈধ আলু (Potato)পাচার রোধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং সব ধরনের চোরা পাচার বন্ধ করবে। সরকার বিভিন্ন জায়গায় নাকা পয়েন্ট এবং চেকপোস্ট গড়ে তোলার পাশাপাশি, বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর নজর রাখার চেষ্টা করছে।
এই পাচার চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ আরও তদন্ত চালাচ্ছে এবং আরও কিছু লরির আটক হওয়া শঙ্কা রয়েছে। পুলিশের মতে, রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় এমন চোরা পথে আলু(Potato) পাচার করার ঘটনা নতুন নয়। প্রতিনিয়ত কিছু মানুষ এসব অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন, যাতে তারা বিশাল অঙ্কের লাভ করতে পারেন। বিশেষত, যখন রাজ্যের মধ্যে আলুর দাম অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন চোরা পথে অন্য রাজ্যে আলু পাচারের ঘটনা বেড়ে যায়। এই ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশকে আরো সতর্ক হতে হবে এবং যাতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও, চোরা পাচারকারীরা নানা কৌশলে এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে আলু পাচারের চেষ্টা করছে। পুলিশও এই বিষয়ে সচেতন হয়ে কাজ করছে, কিন্তু তাদের কাছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল এবং চালু পাচার চক্রগুলি সামনে আসছে। এর ফলে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
এদিকে, রাজ্যের কৃষক সংগঠনগুলিও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, যে হারে আলুর দাম বেড়ে যাচ্ছে, তাতে কৃষকরা উপকৃত হলেও সাধারণ মানুষের পক্ষে তা সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকরা বলছেন, যে পরিমাণে দাম বাড়ছে, তাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের পণ্য ক্রয় করতে পারছেন না। এর ফলে, কৃষকেরাও সামাজিক এবং রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছেন। রাজ্য সরকারকে তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, এমনটাই মত তাঁদের।
বোরো থানার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের আদালতে পেশ করার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আরও অভিযানে নামা হবে। পুলিশ ইতিমধ্যেই তাদের হেফাজত থেকে আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে এবং বাজারে আলুর (Potato) দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য রাজ্য সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন একযোগে কাজ করার চেষ্টা করবে।
এভাবে, আলুর দাম আকাশছোঁয়া হওয়া এবং চোরা পথে পাচার সংক্রান্ত এই ঘটনা রাজ্যবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সরকার ও প্রশাসনের কাছে একটাই আবেদন – সাধারণ মানুষের স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।