বাঁকুড়ায় শীতলপাটির বিক্রি লক্ষাধিক, নতুন করে ফিরছে শিল্পের খ্যাতি

শীতের মরশুম শেষ হওয়ার পথে। ঠিক এর আগে বাঁকুড়ার খাদি মেলায় (Sitalpati) চলছে এক বিশেষ বাজার। এখানে ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি বিক্রি হচ্ছে। শীতলপাটি ঠান্ডা ও…

Sales of Shitalpati Crosses Lakhs in Bankura, Reviving the Art’s Fame

শীতের মরশুম শেষ হওয়ার পথে। ঠিক এর আগে বাঁকুড়ার খাদি মেলায় (Sitalpati) চলছে এক বিশেষ বাজার। এখানে ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি বিক্রি হচ্ছে। শীতলপাটি ঠান্ডা ও মসৃণ হয়। এটি মুর্তা গাছ থেকে তৈরি হয়। এই শীতলপাটি (Sitalpati) এক সময় গ্রামে অতিথি এলে তাকে বসানোর জন্য ব্যবহার হতো। অতিথির সঙ্গে বাড়ির লোকজনও একই পাটিতে বসতেন। সেই সময় শীতলপাটি ছিল খুবই জনপ্রিয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক, কাঠের চেয়ার, সোফা এসে বাজারে জায়গা করে নিয়েছে। এখন অনেক বাড়িতেই শীতলপাটি আর ব্যবহার হয় না। গ্রীষ্মকালে এসি মেশিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার পর শীতলপাটির চাহিদা আরও কমে যায়। তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলার এই প্রাচীন শিল্পের কারিগররা এখন নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছেন। তারা শীতলপাটি দিয়ে তৈরি করছেন ব্যাগ, জুতো, টুপি এবং অন্যান্য সামগ্রী। এসব পণ্য বাজারে নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে।

   

এ বছর বাঁকুড়ার খাদি মেলায় শীতলপাটির বিক্রি বেশ বেড়েছে। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু হয়েছে, আর ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক টাকার শীতলপাটি (Sitalpati) বিক্রি হয়েছে। সুনীল দে, একজন শীতলপাটি শিল্পী, মেলায় এসেছেন কোচবিহার থেকে। তিনি জানান, “অন্য বছরের তুলনায় এবছর বাঁকুড়ায় শীতলপাটির বিক্রি ভালো। সিঙ্গল মাদুরের দাম ৭৫০-৮০০ টাকা, ডাবল মাদুরের দাম ১৮০০-২০০০ টাকা। ব্যাগের দাম ১৫০-৭০০ টাকার মধ্যে।” সুনীলবাবু আরও বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ হাজার টাকার পাটি বিক্রি হচ্ছে মেলায়।”

শীতলপাটি ছাড়াও মেলায় নানা ধরনের হস্তশিল্প বিক্রি হচ্ছে। পিওর সিল্ক, ঘিচা, তসর, সুতির শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি, অলংকার—এই সব কিছু মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। সোনা ও রুপার অলংকারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় এখন কৃত্রিম অলংকারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কলেজের ছাত্রীরা এখন ডিজাইন অলংকার খুব পছন্দ করছে। বাঁকুড়ার খাদি মেলায় এই অলংকারের চাহিদা ভালো। মেলা চলছে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, আর প্রতিদিনই সেখানে কেনাকাটার সংখ্যা বাড়ছে।

এছাড়া মেলায় বিভিন্ন ধরনের হাতে তৈরি অলংকারও বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে সোনার অলংকারের অগ্নিমূল্য দেখে অনেকেই এখন কৃত্রিম অলংকার কিনছেন। বাঁকুড়ার খাদি মেলার এক স্টলে কলেজ পড়ুয়া চয়নিকা বন্দোপাধ্যায় এবং শ্রুতি কুণ্ডু ডিজাইন অলংকার কিনছিলেন। চয়নিকা বললেন, “হাতে তৈরি এই অলঙ্কার এখন ট্রেন্ড তৈরি করেছে। তাই আমরা এখানেই কেনাকাটা করছি।”

এছাড়া মেলায় বাঁকুড়া, কোচবিহার, পশ্চিম মেদিনীপুরসহ বিভিন্ন জেলার শিল্পীরা অংশ নিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থেকে মাদুরের সম্ভার নিয়ে এসেছেন মাদুর শিল্পী চন্দন মুলা। তিনি বলেন, “বাঁকুড়ায় হস্তশিল্পের চাহিদা ভালো। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত উৎসাহজনক।”

খাদির সার্কেল ইন্সপেক্টর বসুদেব কুন্ডু জানান, “গত ৬ দিনে এই মেলায় ১ কোটি ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকার হস্তশিল্প বিক্রি হয়েছে। এটি একটি বড় সাফল্য। মানুষের মধ্যে এখনও হস্তশিল্পের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে।”

বাঁকুড়ার খাদি মেলা শুধু একটি বাণিজ্যিক আয়োজন নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির পরিচয়ও। মেলায় শুধু কেনাকাটা নয়, এক ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশও সৃষ্টি হয়েছে। এই মেলার মাধ্যমে বাংলার প্রাচীন হস্তশিল্প, যেমন শীতলপাটি, পুনরায় জীবন্ত হয়ে উঠছে। শিল্পীরা নতুনভাবে নিজেদের শিল্পের পরিচিতি পাচ্ছেন। আর এই মেলা থেকে তাদের জীবনে নতুন আশা ও সম্ভাবনা যোগ হচ্ছে।

শীতলপাটি এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের মাধ্যমে বাংলার কুটির শিল্পকে আবারও জীবন্ত করে তুলতে চেষ্টার কোনও কমতি রাখছেন না কারিগররা। এই মেলা তাদের জন্য এক নতুন পথের সূচনা হতে পারে, যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে তারা আবারও একবার নিজেদের স্থান পাবে।