বাংলায় ভোটার তালিকা সংস্কার কাজ জোরকদমে এগোচ্ছে। প্রায় ৯০ শতাংশ এনুমারেশন ফর্মের (SIR) ডিজিটাইজেশন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন। আর সেই পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য। সোমবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যে আন-কালেক্টেবল ফর্মের সংখ্যা ৪২ লক্ষ ১০ হাজার ৩৪৬। প্রশ্ন উঠছে, এত সংখ্যক ভোটার কোন কোন কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন? এবং আরও বড় প্রশ্ন, এত বছরের পুরনো ভোটার তালিকায় বাস্তবিক কতটা ‘মৃত অথবা অনুপস্থিত’ নাম ছিল?
আন-কালেক্টেবল বলতে কারা?
নির্বাচন কমিশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যেসব ভোটার মৃত, পাওয়া যায়নি বা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত, স্থায়ীভাবে অন্যত্র সরে গিয়েছেন, ডুপ্লিকেট বা আগেই এনরোল ছিলেন, অন্যান্য কারিগরি কারণে বাতিলযোগ্য তাঁদের তথ্যই আন-কালেক্টেবল হিসেবে ধরা হয়। এই তালিকার মধ্যেই রয়েছে রাজ্যের ভোটার তালিকা পরিশোধনের সবচেয়ে বড় চিত্র।
বিভাগভিত্তিক সংখ্যা: কোন ক্ষেত্রে কত?
কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী—
মৃত্যুজনিত: ২১,০৫,৩৬৯
পাওয়া যায়নি / অনুপস্থিত: ৫,২৯,১৩৪
স্থায়ীভাবে সরে গিয়েছে: ১৪,৬২,০৫৪
ডুপ্লিকেট / আগেই এনরোল: ৯৪,৭০৩
অন্যান্য কারণ: ১৯,০৮৬
নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে এই তথ্য প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জেলা অনুসারে চিত্র: কোন জেলায় সবচেয়ে বেশি আন-কালেক্টেবল?
সবচেয়ে বেশি আন-কালেক্টেবল ফর্ম রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। তার পরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়া। নিচে জেলার ভিত্তিতে পূর্ণ তালিকা:
কোচবিহার – ৯৪,৭০৩
জলপাইগুড়ি – ৭৮,৮৬২
দার্জিলিং – ৯৭,৯১৯
উত্তর দিনাজপুর – ১,৪৬,২২৫
দক্ষিণ দিনাজপুর – ৬৬,৮১২
মালদহ – ১,৩২,৫১৩
মুর্শিদাবাদ – ২,২৫,৬৪০
নদিয়া – ১,৬৬,৫৮৮
উত্তর ২৪ পরগনা – ৫,৬৫,৮৩৬
দক্ষিণ ২৪ পরগনা – ৪,৪৬,৪৮৮
দক্ষিণ কলকাতা – ১,৭৪,২০২
উত্তর কলকাতা – ২,৮৩,১৩২
হাওড়া – ৩,০৯,২৭১
হুগলি – ২,১৬,৯৪৮
পূর্ব মেদিনীপুর – ১,৫৯,৮৯৪
পশ্চিম মেদিনীপুর – ১,৫৮,৯৮৩
পুরুলিয়া – ১,২৫,৫০৯
বাঁকুড়া – ১,০৫,১২৮
পূর্ব বর্ধমান – ১,৭৫,২৬০
বীরভূম – ১,৪১,৬৭৫
আলিপুরদুয়ার – ৯৩,৮২৫
কালিম্পং – ১৩,০৭২
ঝাড়গ্রাম – ৪৯,২৯১
পশ্চিম বর্ধমান – ২,৩২,২২৮
কেন দেরি? বি.এল.ও.-দের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ
কমিশনের পর্যবেক্ষণ রাজ্যের কয়েকটি জেলায় এখনও যথাযথভাবে আপলোড করা হয়নি আন-কালেক্টেবল ফর্মের তথ্য। স্পেশ্যাল অবজার্ভার সুব্রত গুপ্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বহু বি.এল.ও. তিনবার পরিদর্শন করেও আপলোডের কাজ বিলম্বিত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনও খবর মিলেছে যে, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্তাদের নির্দেশে বি.এল.ও.রা ‘শেষ মুহূর্তে আপলোড’ করার অপেক্ষায় রয়েছেন। এটি ভোটার তথ্য হালনাগাদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
কমিশনের বক্তব্য, আপলোডিং সম্পূর্ণ না হলে প্রকৃত ছবি স্পষ্ট হবে না। বিশেষত মৃত ভোটারের সংখ্যা, যা রাজ্য রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষের পথে হলেও, এখনও অনিশ্চয়তার জায়গা রয়েছে। কমিশন আশা করছে—সমস্ত তথ্য আপলোড শেষ হলে বাংলার ভোটার তালিকা হবে আরও নির্ভুল, স্বচ্ছ ও আধুনিক।
