রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) শুধুমাত্র হিন্দুদের বিধায়ক। বুধবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের সোনাচূড়াতে শিবরাত্রির অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শুভেন্দু অধিকারী। আমি সকলের বিধায়ক নই। হিন্দুরা আমাকে এমএলএ করেছেন। আমি হিন্দুদের বিধায়ক। আরও মন্দির গড়ব। সোনাচূড়াতে সাড়ে তিন বিঘা যে জমি আছে, ৬ এপ্রিল সেখানে রাম মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করব।’ তার এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেছেন, ‘ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। ভারতের সংবিধানে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদীয় নিয়মকে তোয়াক্কা না করে স্বঘোষিত বক্তব্যে শুভেন্দু হিন্দুদের রাজা হওয়ার চেষ্টা করছেন। আসলে সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে দাঙ্গা বাঁধানোর ছক কষছেন উনি। নন্দীগ্রাম-সহ রাজ্যের সমস্ত জায়গায় এভাবে উনি উস্কানিমূলক কথা বলছেন। প্রয়োজনে আমরা আইনের দরজায় যাব।’
শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) এই বক্তব্যের পর বিরোধীদের ক্ষোভের সীমা নেই। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা নন্দীগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা পরিতোষ পট্টনায়ক এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘ভোটে জয়ী হওয়ার পরে কোন জনপ্রতিনিধি বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের বিধায়ক কিংবা সাংসদ হিসেবে পরিচিত হন না। তিনি সকলের বিধায়ক কিংবা সাংসদ। শুভেন্দু অধিকারী যে মন্তব্য করেছেন তা সংসদীয় গণতন্ত্রের লজ্জা। উনি এভাবেই সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। মেকি মানবতা পূজারী। ওঁকে ধিক্কার জানাই।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুভেন্দুর বক্তব্যে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা রাজ্যের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তারা বলছেন, ভোটবাক্সে সুবিধা পাওয়ার জন্য বিজেপি একদিকে যেমন হিন্দুত্বের তাসকে হাতিয়ার করেছে, তেমনি শুভেন্দুর এই বক্তব্যও সেই অভিযোগকে আরও একবার সিলমোহর দিল বলে মনে করছেন তারা।
শুভেন্দুর মানবতাবাদী ভাবমূর্তির দিকে আঙ্গুল তোলার পর, রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি আসলে ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে রাজনীতি করছেন? এর মাধ্যমে কি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চান তিনি? এমনটাই মনে করছে অনেকেই। যদিও শুভেন্দু নিজের বক্তব্যে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে রাজনৈতিক মহলে তার অবস্থান নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আসছেন। তার এই সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই সমালোচনার ধারাকে আরও তীব্র করেছে। বিরোধী দলনেতার সাম্প্রদায়িক বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অনেক বিশ্লেষক।
এদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তাকে আক্রমণ করেছে, অন্যদিকে শুভেন্দু নিজে এই মন্তব্যকে নিজের অধিকার বলে দাবি করেছেন।