গুলিয়ে গেল বিভূতিভূষণ-সুনীল, সাহিত্যিকদের অপমান শুভেন্দুর!

ঘাটশিলার সভায় ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র লেখক হিসেবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বললেন শুভেন্দু অধিকারী, আসল লেখক ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়!

একসময় হাওয়া বদল করতে পশ্চিমে যেত বাঙালি। পশ্চিমের জঙ্গল আর আদিবাসীদের নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন দিকপাল বাঙালিরা। সিনেমাও করেছেন সত্যজিৎ রায়- অরণ্যের দিনরাত্রি। লিখেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বাঙালির হাওয়া বদলের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য ঘাটশিলায় সাহিত্যিকের নামই বদলে দিলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Shuvendu Adhikari)।

Advertisements

সামনেই ঘাটশিলা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। বৃহস্পতিবার প্রচারে যান শুভেন্দু অধিকারী। সেখানকার সার্কাস ময়দানে হিন্দির পাশাপাশি বাংলাতেও ভাষণ দেন শুভেন্দু। বাঙালি আবেগ উস্কে দিতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। সেখানেই বিপত্তি।

   

বক্তব্যের শুরুর দিকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন যে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ লিখেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে বেশ কিছুক্ষণ টানা হিন্দিতে ভাষণ। শেষে বাংলায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফের বলেন যে অরণ্যের দিনরাত্রি উপন্যাসের লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অরণ্যের দিনরাত্রি তো লিখেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

“অরণ্যের দিনরাত্রি” প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৮ সালের দেশ পুজো সংখ্যা-তে। সেই সময়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ইতিমধ্যেই বিখ্যাত কবি ও কথাসাহিত্যিক, কিন্তু সেই সংখ্যার শেষ সময়ে সম্পাদক সাগরময় ঘোষ হঠাৎই তাঁকে বলেন যে, পুজো সংখ্যার জন্য একটা বড় উপন্যাস প্রয়োজন — আর সেটি তাঁকেই লিখতে হবে। সুনীল নিজেই একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ লিখেছিলাম খুব তাড়াহুড়োয় — পনেরো-ষোলো দিনের মধ্যে। লিখে শেষ করার পর নিজেও অবাক হয়েছিলাম যে উপন্যাসটা এত মসৃণভাবে বেরিয়ে গেল।”

Advertisements

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে (বিশেষ করে শঙ্খ ঘোষ, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, সমর সেন প্রমুখের সহচর্যে) প্রায়ই বিহার-ঝাড়খণ্ডের অরণ্যাঞ্চলে ভ্রমণে যেতেন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এই গল্পের রূপরেখা তৈরি হয় — শহুরে চার তরুণের ছুটি কাটাতে গিয়ে অরণ্যের মধ্যে নিজেদের প্রকৃত সত্তা আবিষ্কারের গল্প।

এই উপন্যাসেই অনুপ্রাণিত হয়ে সত্যজিৎ রায় ১৯৭০ সালে “অরণ্যের দিনরাত্রি” চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।
চলচ্চিত্র মুক্তির পর উপন্যাসটির জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়।

ঘাটশিলার উপর ভিত্তি করে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস আরণ্যক। সেটাই কি গুলিয়ে ফেললেন শুভেন্দু অধিকারী??