কলকাতা: কালীগঞ্জে তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া বোমায় মৃত্যু হয়েছিল তামান্না খাতুন নামে ৯ বছরের এক শিশুকন্যার। এই ঘটনার পরের দিন নিহত শিশুর পরিবারের পাশে দাঁড়ান ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবির৷ তামান্নার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিতে গিয়ে বিতর্কে জড়ান তিনি। অভিযোগ, দলীয় অনুমতি ছাড়াই তামান্নার পরিবারের কাছে যান হুমায়ুন এবং তাঁদের হাতে অর্থ তুলে দিতে চান। এর পরই ডেবরার বিধায়ককে শোকজ নোটিশ পাঠায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্রে খবর, হুমায়ুন কবিরকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে, কেন তিনি দলকে না জানিয়ে ওই কাজে যুক্ত হলেন। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আর সেই সঙ্গে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে শুক্রবার সকালে ফেসবুকে মুখ খুলেছেন বিধায়ক হুমায়ুন কবির।
“শোকজ নোটিশ কি পত্রিকায় বেরোবার মতো বিষয়?”
এদিন সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ফুঁসে ওঠেন হুমায়ুন৷ দীর্ঘ একটি পোস্টে ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক দলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন৷ তিনি লেখেন, “৩১ বছর হাইলি ডিসিপ্লিনড বিভাগে কাজ করেছি। এখন বিধায়ক। এছাড়া কি আমার আর কোনও স্বত্বা নেই? আমি পার্টির অন্য কোনও পোস্টেও নেই। খবর হতেই পারে, কিন্তু শোকজ নোটিশ কি পেপারে বেরোবার মত ব্যাপার?”
এই পোস্ট ঘিরেই রাজনৈতিক বিতর্ক আরও গাঢ় হয়। একদিকে দল তাঁকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিচ্ছে, অন্যদিকে হুমায়ুন কবির স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন একজন মানুষ হিসেবে, দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি একজন অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলেন।
কি ঘটেছিল সেদিন? showcause notice to Humayun Kabir
বুধবার, কালীগঞ্জের মোলান্দি গ্রামে যান হুমায়ুন কবির। নিহত তামান্নার মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তাঁর হাতে একটি টাকার খাম দিতে চান। তাঁর গাড়িতে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রেরণা’-র নাম লেখা ছিল।
তিনি বলেন, “মানুষ হিসেবে এসেছি, একজন বাবা হিসেবে এসেছি।” তবে তামান্নার মা সাবিনা ইয়াসমিন সেই টাকা নিতে অস্বীকার করেন। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই বলেন, “আমার টাকা চাই না। আমার জমি আছে। আমি চাই দোষীদের ফাঁসি হোক। এখনও সবাইকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।” এই গোটা ঘটনা লাইভ সম্প্রচারিত হওয়ায় মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিও। দলের অন্দরে শুরু হয় ব্যাপক বিতর্ক।
বিজেপির তোপ: ‘পুরোটাই সাজানো খেলা’
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপি বিধায়ক ও মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বলেন, “টাকা দিয়ে নিহতদের পরিবারকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা তৃণমূল বহুবার করেছে। হুমায়ুন কবিরকে ওরাই পাঠিয়েছিল। এখন মানুষ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে দেখে তাঁকে শোকজ করে পিঠ বাঁচাতে চাইছে। এটা পুরোটাই সাজানো খেলা।”