‘বাংলা শিল্পবিরোধী নয়’, কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন শশী পাঁজা

বাংলায় শিল্প নেই (Shashi Panja)। শিল্পের বিরোধিতা করে বাংলাকে পিছিয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার এই অভিযোগ বার বার শোনা গিয়েছে বিরোধীদের মুখে। এবার কেন্দ্রের তথ্যকে চ্যালেঞ্জ…

Shashi Panja challenge

বাংলায় শিল্প নেই (Shashi Panja)। শিল্পের বিরোধিতা করে বাংলাকে পিছিয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার এই অভিযোগ বার বার শোনা গিয়েছে বিরোধীদের মুখে। এবার কেন্দ্রের তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা তথ্য দিলেন তৃণমূল সাংসদ শশী পাঁজা।

তিনি বলেছেন বছরের পর বছর ধরে বিজেপি (BJP) বাংলার বিরুদ্ধে ‘শিল্পবিরোধী’ তকমা সাঁটিয়ে একপেশে প্রচারণা চালিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার তাদের নিজেদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের তথ্যই সেই মিথ্যাচারকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে।

   

তিনি দাবি করেন সম্প্রতি সংসদে কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের (MCA) দেওয়া তথ্যে স্পষ্ট হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সরকারের আমলে বাংলার শিল্প ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি শুধু স্থিতিশীলই নয়, বরং উল্লেখযোগ্য উন্নতির পথে এগিয়েছে।

এই তথ্যের আলোকে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ শশী পাঁজা বিজেপির প্রতি তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, “আপনাদের নিজেদের মন্ত্রকই আপনাদের ‘শিল্পবিরোধী বাংলা’র গল্পকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।”

তিনি কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে বাংলায় নথিভুক্ত ব্যবসায়িক সংস্থার সংখ্যা ছিল ১,৩৭,১৫৬। ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৫০,৩৪৩-এ। এই তথ্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা শিল্প ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

গত ছয় বছরে (২০১৯-২০২৫) বাংলায় ৪৪,০৪০টি নতুন কোম্পানি নথিভুক্ত হয়েছে, যেখানে মাত্র ১,৭৪২টি কোম্পানি তাদের নিবন্ধিত কার্যালয় অন্য রাজ্যে স্থানান্তর করেছে। অর্থাৎ, প্রতি একটি কোম্পানি যে বাংলা ছেড়েছে, তার বিপরীতে প্রায় ২৫টি নতুন কোম্পানি রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে বাংলার ব্যবসায়িক খাতে নিট ৪২,২৯৮টি কোম্পানির বৃদ্ধি ঘটেছে।

এই পরিসংখ্যান বাংলার শিল্প-বান্ধব পরিবেশ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতিফলন।শশী পাঁজা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বিজেপি বাংলাকে শিল্পবিরোধী বলে অপপ্রচার চালালেও, সত্য হলো বাংলা ব্যবসা গড়ছে, কর্মসংস্থান তৈরি করছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনের ফলেই বাংলা আজ বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।”

তিনি আরও জানান, বাংলা গ্লোবাল বিজনেস সামিট (BGBS) ২০২৫-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে রাজ্য সরকার বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে। এই সম্মেলনে ২১২টি সমঝোতা স্মারক (MoUs) এবং বিনিয়োগ প্রস্তাবে ৪,৪০,৫৯৫ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি এসেছে, যা রাজ্যের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

Advertisements

বিজেপির পক্ষ থেকে অমিত মালব্যর মতো নেতারা দাবি করেছেন যে ২০১১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬,৬৮৮টি কোম্পানি বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে চলে গেছে। তবে এই সংখ্যার পেছনের পূর্ণাঙ্গ চিত্রটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই সময়ে বাংলায় নতুন কোম্পানি নথিভুক্তির হার স্থানান্তরের তুলনায় অনেক বেশি।

শুধুমাত্র সংখ্যার একটি অংশ তুলে ধরে বিজেপি রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাফল্যকে ঢাকতে চাইছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই অপপ্রচারের উদ্দেশ্য হলো রাজ্যের ইতিবাচক ইমেজকে ক্ষুণ্ন করা।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা শুধু শিল্পক্ষেত্রেই নয়, পরিকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (MSME) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

রাজ্য সরকারের নীতিগত স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজলভ্য সুযোগ-সুবিধা এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা বাংলাকে শিল্পের ক্ষেত্রে একটি প্রতিযোগিতামূলক গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলার অর্থনীতি ক্রমশ বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে, এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে।

শশী পাঁজা আরও বলেন, “বাংলার অর্থনীতি কেবল সংখ্যার খেলা নয়, এটি মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির গল্প। প্রতিটি নতুন কোম্পানি মানে নতুন কর্মসংস্থান, নতুন সুযোগ। বিজেপির মিথ্যাচার সত্ত্বেও, বাংলার মানুষ জানে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাদের ভবিষ্যৎ গড়ছে।” তিনি বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “আপনারা মিথ্যা বন্ধ করুন, বাংলা গড়ছে।”

পত্রবোমার মাঝে মেসার্সে ম্যাচ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত বাগান শিবিরের

এই তথ্য এবং সাফল্যের আলোকে বাংলার শিল্প-বান্ধব ইমেজ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে, এবং বিজেপির অপপ্রচার সত্ত্বেও বাংলা তার সম্ভাবনার পূর্ণ প্রকাশ ঘটাচ্ছে।