বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবন এবং খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতির যৌথ উদ্যোগে গত ৭ ও ৮ ডিসেম্বর দুই দিনের হৃদয় মিলন উৎসব মহাসমারোহে উদযাপিত হল। শান্তিনিকেতনের (Shantiniketan) এই পবিত্র মাটিতে দুই বাংলার সংস্কৃতি ও সাহিত্যের মিলন উৎসব যেন এক নতুন প্রাণ সঞ্চার করল।
বিশ্বভারতীর উপাচার্যসহ একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানের মর্যাদা বাড়িয়েছে। তাঁদের ভাব গম্ভীর, মার্জিত এবং শৈল্পিক বক্তব্য অনুষ্ঠানের মহিমা বাড়িয়েছে। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, পাঞ্জাব, আসাম এবং ত্রিপুরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুণী শিল্পীদের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে আরও বৈচিত্র্যময় ও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
রবীন্দ্র ভাবনায় বিশ্বময় মিলন
খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক শ্রী কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, “এই হৃদয় মিলনের মহাযজ্ঞ প্রতি বছরই হয়ে থাকে। এর মূল উদ্দেশ্য হল সারা বিশ্বের বাঙালি সমাজের কাছে রবীন্দ্রনাথের আদর্শ ও সুস্থ সংস্কৃতি সঞ্চারিত করা।”
এই উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করতে খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতি আমেরিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক উৎসাহী মানুষকে সদস্যপদ প্রদান করেছে। তাঁদের অংশগ্রহণ এই উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক স্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা দিয়েছে।
বাংলাদেশের অভাব বেদনাদায়ক
তবে এবারের মিলন মেলা একটি বড় দুঃখের ছায়ায় আবৃত ছিল। বাংলাদেশের বন্ধুদের উপস্থিতি প্রায় অনুপস্থিত। রাজনৈতিক ও পরিস্থিতিগত জটিলতার কারণে বাংলাদেশের কোনও প্রতিনিধি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। এই বিষয়ে শ্রী ভট্টাচার্য বলেন, “এবারের উৎসবটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। আমরা সকলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন। আশা করি, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং আমরা আবার সম্পূর্ণ মিলনের আনন্দ উপভোগ করতে পারব।”
শিল্প ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের মঞ্চ
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন রাজ্য ও দেশ থেকে আগত শিল্পীদের পরিবেশনা। তাঁদের গানে, কবিতায় এবং কথন শিল্পে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্র ভাবনার বৈচিত্র্য। পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উঠে আসে শান্তিনিকেতনের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
সমাপ্তি ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
উৎসবের শেষ দিন বিশ্বভারতীর উপাচার্য এই উদ্যোগকে প্রশংসা করে বলেন, “খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতি এবং বাংলাদেশ ভবনের এই মিলিত প্রচেষ্টা দুই বাংলার মনের দূরত্ব ঘোচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবে, এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন শ্রী ভট্টাচার্য। তিনি আরও বলেন, “এই মিলন মেলা যেন দুই বাংলার একতার প্রতীক হয়ে ওঠে।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ ও শান্তিনিকেতনের ভাবনা সারা বিশ্বের বাঙালিদের হৃদয়কে একত্রিত করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এই উৎসব সেই চেতনারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তবে বাংলাদেশের বন্ধুদের অনুপস্থিতি এই উৎসবকে কিছুটা অসম্পূর্ণ করে তুলেছে। তবুও, মিলনের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে, সেই প্রত্যাশাই করেছেন উপস্থিত সকলে।