সামশেরগঞ্জের তাণ্ডবে ‘বহিরাগত’দের হাত দেখছে জঙ্গিপুর সাংসদ-বিধায়ক

মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সামশেরগঞ্জে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের প্রতিবাদের নামে সাম্প্রতিক তাণ্ডবের (Shamsherganj Violence) ঘটনায় উঠে আসছে ‘বহিরাগত দুষ্কৃতিদের’ নাম। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই…

MP, MLA Blame 'Outsiders' for Murshidabad Unrest

মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সামশেরগঞ্জে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের প্রতিবাদের নামে সাম্প্রতিক তাণ্ডবের (Shamsherganj Violence) ঘটনায় উঠে আসছে ‘বহিরাগত দুষ্কৃতিদের’ নাম। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই অশান্তির পিছনে মূলত বাইরে থেকে আগত দুষ্কৃতিরাই দায়ী। তাঁর মতে, এই ধরনের ঘটনা নিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। সামশেরগঞ্জে যে পরিমাণ বহিরাগত দুষ্কৃতি প্রবেশ করেছে, তাতে পুলিশের দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিকে, ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামও একই অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বাড়িও এই তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই অশান্তির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে মোট ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় একদিনে ৩০ জন গ্রেফতার হয়েছে।

সাংসদের অভিযোগ: ‘বহিরাগতরাই মূল দায়ী’

জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সামশেরগঞ্জে যাঁরা এই তাণ্ডব সংঘটিত করেছে, তাঁদের প্রায় সকলেই বাইরের। তিনি বলেন, “কোথা থেকে এরা ঢুকছে, তা আমরা জানি না। তবে এই ধরনের ঘটনা এর আগে সামশেরগঞ্জে কখনও ঘটেনি।” তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় তিনি গভীর শোকাহত। এর ঠিক একদিন আগে সামশেরগঞ্জে একটি পৃথক ঘটনায় বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই ঘটনায়ও শোক প্রকাশ করেছেন সাংসদ। তিনি জানান, মৃতদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাঁর দলের তরফে। খলিলুর রহমানের মতে, পুলিশ যদি দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই ধরনের অশান্তি ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। তিনি পুলিশের কাছে বহিরাগতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিধায়কের বাড়িতেও হামলা

এই তাণ্ডবের ঘটনায় ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বাড়িও রেহাই পায়নি। সামশেরগঞ্জ থানা থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত তাঁর বাড়িতে দুষ্কৃতিরা হামলা চালায়। মনিরুল ইসলামও সাংসদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, “বাইরে থেকে লোকজন না ঢুকলে এই ধরনের কাণ্ড ঘটত না। এতদিন এই এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেনি। ভিতরের লোকজন তো রয়েছেই, কিন্তু বাইরের লোকজন এসে এই তাণ্ডব শুরু করেছে।” তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় তাঁর বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এবং তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। বিধায়কের মতে, এই ধরনের ঘটনা এলাকার শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করছে, এবং এর পিছনে বহিরাগতদের হাত স্পষ্ট।

পুলিশের পদক্ষেপ

রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সামশেরগঞ্জে তাণ্ডবের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে মোট ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধুমাত্র একদিনে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অশান্তির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত চলছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF)-সহ ভারী পুলিশ বাহিনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। পাথর ছোঁড়া, সম্পত্তি ভাঙচুর এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনার পর পুলিশ কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত বহিরাগতদের চিহ্নিত করতে বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।

এলাকার পরিস্থিতি

সামশেরগঞ্জে এই তাণ্ডবের ঘটনা এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাংসদ ও বিধায়কের অভিযোগ অনুযায়ী, বহিরাগত দুষ্কৃতিরা এলাকায় প্রবেশ করে পরিকল্পিতভাবে অশান্তি সৃষ্টি করছে। এর আগে সামশেরগঞ্জে এমন ঘটনা তেমন একটা ঘটেনি বলে স্থানীয়রাও জানিয়েছেন। তবে, একদিন আগে বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে খুনের ঘটনা এলাকায় উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Advertisements

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাংসদ খলিলুর রহমান এবং বিধায়ক মনিরুল ইসলাম দুজনেই এই ঘটনার জন্য বহিরাগতদের দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি, এই তাণ্ডবের পিছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং পুলিশের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলোও এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

সামশেরগঞ্জে ওয়াকফ বিল প্রতিবাদের নামে সংঘটিত তাণ্ডবের ঘটনা মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান এবং ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, বহিরাগত দুষ্কৃতিরা এই অশান্তির জন্য দায়ী। পুলিশ ইতিমধ্যে ১৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে, এবং তদন্ত চলছে। তবে, এই ঘটনা এলাকার শান্তি ও সম্প্রীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তি ফিরে আসার প্রত্যাশা করছেন, এবং এই ঘটনার পিছনে থাকা মূল দোষীদের চিহ্নিত করার জন্য পুলিশের উপর নির্ভর করছেন।