কলকাতা: বহুদিন ধরেই চলছিল কানাঘুষো। দলের অন্দরমহলে চর্চাও ছিল জোরদার। অবশেষে রাজ্য বিজেপির সভাপতি বদলের প্রক্রিয়ায় পড়ল আনুষ্ঠানিক ছাপ। আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যেই রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হতে চলেছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন দলের বিধায়ক ও রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার দীপক বর্মন। সুকান্ত জমানা শেষে, বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি পদে শমীক ভট্টাচার্যের দায়িত্ব নেওয়াটা কি এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা? ইঙ্গিত তেমনই৷
সুকান্ত মজুমদারের কার্যকাল শেষ
বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ইতিমধ্যেই তাঁর পূর্ণ কার্যকাল অতিক্রম করেছেন এবং বর্তমানে এক্সটেনশন বা বর্ধিত দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বিজেপির “এক ব্যক্তি, এক পদ” নীতির কারণেই আরও একবার তাঁকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা প্রায় অসম্ভব বলে দলীয় সূত্রে খবর।
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে রাজ্য নেতৃত্বে এই রদবদলকে অত্যন্ত কৌশলগত পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বটে, তবে এখনো তারা তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যেখানে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে, তৃণমূল সেখানে এগিয়ে থেকে ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
রাজ্য বিজেপিতে একাধিক নতুন মুখ Shamik Bhattacharya BJP President
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকে রাজ্য বিজেপিতে একাধিক নতুন মুখ উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হলেন শুভেন্দু অধিকারী-যিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন এবং নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে নজর কাড়েন। তবে দলের একটি পুরনো অংশ এখনও তাঁর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, মূলত তাঁর দীর্ঘ তৃণমূল-যোগের কারণেই।
এই পরিস্থিতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যকে নিয়ে। সম্প্রতি দিল্লিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর একাধিক বৈঠক এই সম্ভাবনাকে আরও উসকে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের ‘অ্যাবসোলিউট লয়ালিস্ট’ হিসেবে পরিচিত শমীকবাবুর দলজুড়ে গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে, এমনটাই মত বিজেপির একাংশের।
তবে চমক দেওয়ার মতো আর একটি সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা চলছে-দলের এক বা একাধিক মহিলা নেত্রীও রয়েছেন দৌড়ে, যদিও তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু বলেনি নেতৃত্ব।
দলের এক প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই সময় সভাপতি পদে এমন কাউকেই চাই, যিনি সংগঠনের ভিত মজবুত করতে পারবেন এবং দলকে বিধানসভা ভোটের আগে আক্রমণাত্মকভাবে প্রস্তুত করতে পারবেন।”
দৃষ্টি এখন লক্ষ্মীবারের দিকেই-দলীয় পদক্ষেপ কাকে সামনে এনে নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে চায়, সেটাই দেখার।