বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ‘উন্নয়ন ফি’ আদায়ের অভিযোগ, শুরু হয়েছে তদন্ত

পূর্ব বর্ধমানের মেমারি এক নম্বর ব্লকে বাংলার বাড়ি (Banglar Bari) প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ‘উন্নয়ন ফি’ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পে অনুদান…

Several Panchayats in Memari Accused of Taking Money from Banglar Bari Scheme Beneficiaries

পূর্ব বর্ধমানের মেমারি এক নম্বর ব্লকে বাংলার বাড়ি (Banglar Bari) প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ‘উন্নয়ন ফি’ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পে অনুদান পেয়ে যারা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন, তাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ‘উন্নয়ন ফি’ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষত, দলুইবাজার দু’নম্বর পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলি সামনে এসেছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এই ফি নেওয়ার ব্যাপারে মাইকিং করে প্রচার চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই মেমারি ব্লক ও জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েষা রানি বিষয়টির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মেমারি (Banglar Bari) এক নম্বর ব্লকে মোট ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে এবং প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ বাংলার বাড়ি প্রকল্পে সরকারি অনুদান পাচ্ছেন। অভিযোগ, যেসব পঞ্চায়েতের মধ্যে ‘উন্নয়ন ফি’ নেওয়া হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই তৃণমূলের দখলে।

   

তবে এই বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। দলুইবাজার দু’নম্বর পঞ্চায়েতের সদস্য রাজীব মালিক জানিয়েছেন, প্রকল্পের শংসাপত্র পেতে ১০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যদিও তিনি দাবি করেছেন, এ ধরনের অর্থ নেওয়া ‘উন্নয়ন ফি’-এর অংশ। অন্যদিকে, মেমারি এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি বিডিওর কাছে অভিযোগ করেছেন এবং বিষয়টির তদন্ত চলছে।

নিমো দু’নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ আব্দুল রহমান স্বীকার করেছেন, উন্নয়ন ফি নেওয়া হয়েছে, তবে তিনি জানিয়েছেন, যেসব ব্যক্তিরা বড় বাড়ি নির্মাণ করছেন তাদের কাছ থেকে এই ফি আদায় করা হচ্ছে, কিন্তু যারা প্রকল্পের মডেল অনুযায়ী বাড়ি করছেন তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিতাই ঘোষ জানিয়েছেন, তারা কাউকে জোর করে টাকা দেওয়ার জন্য বলেননি, তবে যারা ইচ্ছা করেছেন, তাদের কাছ থেকেই এই ফি নেওয়া হয়েছে।

মেমারির তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত কর্তারা এই ফি নিচ্ছে, যা সঠিক নয়।” তিনি আরও জানান, বিষয়টি জানার পর তিনি বিডিওকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে, এই ঘটনার বিরুদ্ধে জেলা বিজেপি নেতৃবৃন্দ সরব হয়েছেন। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র মন্তব্য করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা এখন কার্যত অগ্রাহ্য হয়ে পড়েছে। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের নেতারা এখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করতে সাহস পাচ্ছেন।” যদিও, উপভোক্তারা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি, কারণ তাদের আশঙ্কা, মুখ খুললে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আটকে যেতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির কাজে কোনো মধ্যস্থতাকারী বা তৃতীয় পক্ষের সহায়তা না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবান্নের নির্দেশ অনুযায়ী, বিডিওদের প্রতিটি ব্লকে বাজার কমিটি ও নির্মাণ সামগ্রীর বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে যাতে সঠিক দামে গুণগতমান বজায় রেখে সামগ্রী পাওয়া যায়।

এখন দেখার বিষয়, এই অভিযোগের তদন্তের পর প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয় এবং প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা এই ফি আদায়ের বিষয়টি সম্পর্কে কী সিদ্ধান্ত নেয়।