কলকাতা: রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলের টাকা অবৈধভাবে অন্য দফতরে পাঠানো হয়েছে— বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কেন্দ্রের পাঠানো স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফান্ড (SDRF)–এর টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে বলে দাবি তাঁর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের দিনেই এই অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক তরঙ্গ তুললেন শুভেন্দু।
শিলিগুড়িতে উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক
সোমবার শিলিগুড়িতে উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। বন্যাকবলিত এলাকায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং মৃতদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়ার কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। এই সময়েই শুভেন্দুর দাবি, রাজ্য সরকার বিপর্যয় তহবিলের টাকা পিএনআরডি বা পঞ্চায়েত দফতরে পাঠিয়েছে অবৈধভাবে, যা কেন্দ্রীয় নিয়ম লঙ্ঘনের সামিল।
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “এই টাকা অন্য কোনও দফতরে পাঠানো যায় না। কিন্তু উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এই টাকা পিএনআরডি দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওখানে ‘ভাইপো ম্যান’ রয়েছেন। মনোজ পন্থ নিজে সই করেছেন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ।”
অন্য দফতরে ‘ট্রান্সফার’ SDRF Fund Misuse West Bengal
শুভেন্দুর দাবি, চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার এসডিআরএফ তহবিলে ৯৮৩ কোটি টাকা দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে সেই অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪,৪৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজ্য সরকার প্রায় ১,৩৪৭ কোটি টাকা বন্যাকবলিত দুর্গতদের জন্য বরাদ্দ রেখে অন্য দফতরে ‘ট্রান্সফার’ করেছে বলে অভিযোগ তাঁর।
বিরোধী দলনেতার কথায়, “এই টাকা বন্যাকবলিতদের জন্য। তারপরেও সেটি ট্রান্সফার করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ভোটের আগে এই টাকা দিয়ে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে অর্থ বিতরণ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। নরেন্দ্র মোদী ৩০ হাজার কোটি টাকা বাড়ি তৈরির জন্য দিয়েছিলেন, আপনারা তো সবটাই খরচ দেখিয়ে ফেলেছেন।”
শুধু অভিযোগেই থেমে থাকেননি শুভেন্দু অধিকারী। দাবি তুলেছেন ক্যাগ (CAG) অডিটেরও। তাঁর বক্তব্য, “এই ঘটনায় অবিলম্বে একটি ক্যাগ রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। যাতে স্পষ্ট হয় কীভাবে এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে এবং কার নির্দেশে।”
গাইডলাইন লঙ্ঘন হবে
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে শুভেন্দুর দাবি, “আপনি যদি উত্তরবঙ্গে বন্যাদুর্গতদের ক্ষতিপূরণ দেন, তাহলে উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামকেও বিপর্যস্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করুন। তা না হলে গাইডলাইন লঙ্ঘন হবে।”
এছাড়া বাংলার বাড়ি প্রকল্প নিয়েও রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, “বালি চুরির কারণে যে দশা হয়েছে, তাতে এক লক্ষ টাকায় বাড়ি তৈরি সম্ভব নয়। সেটি বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করা হোক।”
রাজ্যের তরফে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের প্রাক্কালে শুভেন্দুর এই মন্তব্যে ফের সরগরম রাজনৈতিক মহল। প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী এই অভিযোগের জবাব দেন কিনা, সেদিকেই এখন নজর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।


