কলকাতা: রাজ্যের পশ্চিম ও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দাবদাহের জেরে নাজেহাল ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-অভিভাবক সকলেই। বর্ষা ঢুকে পড়েছে উত্তরবঙ্গে, কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে এখনও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে একাধিক জেলায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার শেষমেশ রাজ্যের সমস্ত স্কুলে দু’দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করল।
তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত
বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স-এ পোস্ট করে জানান, “তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা বিবেচনা করে ১৪ এবং ১৫ জুন (শুক্র ও শনিবার) রাজ্যের পার্বত্য জেলা বাদে বাকি সমস্ত জেলার সরকার ও সরকার পোষিত প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে।”
এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও শিক্ষা সংসদকে এই নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন।
ছুটি নিয়ে বিতর্ক এবং প্রশাসনিক অদূরদর্শিতা? schools remain closed for two day
উল্লেখ্য, দীর্ঘ গরমের ছুটির পর গত ২ জুন রাজ্যের স্কুলগুলি খুলেছে। কিন্তু এই ক’দিনেই একাধিক জেলায় অতিরিক্ত গরমে প্রাথমিক স্তরের বহু পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে।
গত সপ্তাহেই গরমের মোকাবিলায় সকাল ৬.৩০ থেকে ১১টা পর্যন্ত ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ডিপিএসসি। শনিবার ক্লাস ছিল মাত্র দেড় ঘণ্টা। কিন্তু এই নির্দেশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তা বাতিল করে। তার পরেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে।
পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল এ বিষয়ে বলেন, “আইন মেনেই কাজ করতে হয়। ডিপিএসসিগুলি নিজে থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমরা সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম, সেই প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত।”
শিক্ষক মহলের ক্ষোভ
এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগত জানালেও রাজ্যের শিক্ষক সংগঠনের একাংশ রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “এপ্রিলের শেষেই যখন গরমের ছুটি ঘোষণা হয়েছিল, আমরা তখনই বলেছিলাম, সময় বুঝে নয়, বেছে বেছে ছুটি ঘোষণা করা উচিত। মে মাসে বেশ ভাল আবহাওয়া ছিল। এখন যখন সত্যিকারের দাবদাহ, তখন স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে পড়ুয়ারাও বিপদে, শিক্ষকেরাও। আগামী দিনে পুরো বিষয়টি স্কুলের নিজের সিদ্ধান্তে ছেড়ে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত।”
দক্ষিণবঙ্গের গরমে হাল খারাপ, বর্ষা এখনও দূরে
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির আশার আলো খুবই ক্ষীণ। বর্ষা ঢুকতে পারে ১৬ জুনের পর। তার আগে পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে গরম ও আদ্রতা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি এড়াতে সরকারিকেই আরও আগেভাগে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষামহল।