বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে এবং বিশেষত আমাদের দেশে এটি বেশ তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। সার্বিকভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শীতকালেও এখন আগের মতো কনকনে ঠাণ্ডা অনুভূত হয় না। বিশেষত, চলতি শীতে, শীতের অবস্থা অনেকটাই অস্বাভাবিক। বছর শেষ হওয়ার আগেই কয়েকদিন তীব্র শীত অনুভূত হলেও, বর্তমানে শীতের শক্তি অনেকটাই কমে গেছে। শীত ও গরমের এই ওঠাপড়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে আমাদের সংক্রান্তি দিন, যা পূর্বে একসময় শীতের ‘শুরু’ হিসেবে গণ্য হত। কিন্তু, আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, আজকের দিনটি সে ধারণা অনেকটাই ভেঙে দিয়েছে।
সংক্রান্তি, বাংলা সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ দিন হিসেবে পরিচিত। এই দিনটি ছিল শীতের প্রকৃত প্রবেশের সময়। তবে আজকাল সংক্রান্তির দিনও শীতের আমেজ আর আগের মতো অনুভূত হচ্ছে না। গত ১২ বছরে যে ১২ জানুয়ারি ছিল তৃতীয় উষ্ণতম দিন, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রমাণিত যে শীতের এই রূপ পরিবর্তন ঘটেছে। এই দিনটি সাধারণত শীতের তীব্রতার জন্য চিহ্নিত হলেও, এবার তাপমাত্রা ছিল ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি। সাধারণত এই সময়টাতে তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা অনেকটাই উঁচু পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আবহাওয়া দফতরের মতে, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ দুইটি ঝঞ্ঝার প্রভাব। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে দুটি ঝঞ্ঝা সৃষ্টি হওয়ার কারণে, বাতাসের গতিপথ এবং গতি পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে শীতের অনুভূতি কমে গেছে। এর ফলস্বরূপ, শীতের প্রভাব শুধু শহর কলকাতা নয়, আশেপাশের জেলা থেকেও কমে গেছে। সেজন্য, শীতের প্রকৃত অনুভূতি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এছাড়া, মাঘের প্রথম কয়েকদিনেও শীতের কোনো তীব্রতা আশা করা যাচ্ছে না। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১৮ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে, তবে এটি কী পরিমাণে কমবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সেই হিসেবে, সংক্রান্তির পরবর্তী সময়ের জন্য শীতকে মনে হয় না ‘সামান্য বিশ্রামে’ যাবে। বরং, পৃথিবীজুড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এই ধরনের আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং তার প্রভাব আরও প্রকট হতে পারে।
পরিশেষে, আবহাওয়া পরিবর্তন প্রমাণ করছে যে পৃথিবীর প্রকৃতি কেবলমাত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নয়, আমাদের ভাবনাকে ও বদলাচ্ছে। শীতের সেই পুরনো রূপ হারিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা সামনে যে আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি, তা হয়তো আমাদের আরেকটু পরিস্কারভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করবে।