তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষ (Sagarika) তীব্র ভাষায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশের চিঠির সমালোচনা করেছেন, যেখানে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনাকে তিনি বাংলা ও বাঙালিদের প্রতি বিজেপির ‘ঘৃণ্য, পক্ষপাতদুষ্ট, নৃশংস, দুষ্ট এবং বৈষম্যমূলক মনোভাব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন যে, এই চিঠি জারি করা দিল্লি পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা হোক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া হোক এবং অমিত শাহ নিজে জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এই ঘটনা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতি অপমান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে স্বীকৃত একটি ভাষা।
ঘটনার পটভূমি
দিল্লি পুলিশ, যিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেন এবং সরাসরি অমিত শাহের তত্ত্বাবধানে থাকেন, তারা একটি অফিসিয়াল চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, যেখানে সাগরিকা ঘোষ এবং অন্যান্য বিরোধী নেতারা এটিকে বিজেপির বাঙালি-বিদ্বেষী মনোভাবের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
সাগরিকা ঘোষ তার এক্স পোস্টে বলেছেন, “অমিত শাহের পুলিশ বাংলা ভাষাকে—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষাকে—‘বাংলাদেশি’ ভাষা বলেছে। বাংলা ও সমস্ত বাঙালির প্রতি এই ঘৃণ্য ও জঘন্য অপমানের পর বিজেপির ভোট ভিক্ষা করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।”
এই ঘটনা বাংলা ভাষার সাংবিধানিক মর্যাদার প্রতি অপমান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা কোটি কোটি বাঙালির মাতৃভাষা। এই ধরনের উল্লেখ বাঙালি সম্প্রদায়ের পরিচয় ও সংস্কৃতির প্রতি আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সাগরিকা ঘোষ ছাড়াও একাধিক বিরোধী নেতা এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। এক্স-এর একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলে চিহ্নিত করা বিজেপির বাঙালি বিদ্বেষী লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা।
এবার বাঙালিরা যখন পাল্টা দেবে, তখন বিজেপি পালাবার পথ পাবে না।” অন্য একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, “দিল্লি পুলিশের এই চিঠি সংবিধানের অষ্টম তফসিলের লঙ্ঘন এবং এটি বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতি বিজেপির ঘৃণার প্রকাশ।”
সিপিআই(এম) নেতা বৃন্দা কারাত এবং অনুরাগ সাক্সেনাও এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি পৃথক ঘটনায় অমিত শাহের কাছে চিঠি লিখে বাঙালি অভিবাসীদের উপর দিল্লি পুলিশের হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন।
তারা উল্লেখ করেছেন যে, বাঙালি অভিবাসীদের হাতকড়া পরানো, মারধর করা এবং ভয় দেখানো হয়েছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তাদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনাগুলি বিজেপির বাঙালি-বিরোধী মনোভাবের অভিযোগকে আরও জোরদার করছে।
সাগরিকা ঘোষের দাবি
সাগরিকা ঘোষ তার প্রতিবাদে স্পষ্টভাবে তিনটি দাবি উত্থাপন করেছেন: প্রথমত, সংশ্লিষ্ট দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তার অবিলম্বে সাসপেনশন; দ্বিতীয়ত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা; এবং তৃতীয়ত, অমিত শাহের জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা। তিনি এই ঘটনাকে বিজেপির বাংলা ও বাঙালিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাবের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “এই ধরনের ভাষা ব্যবহার কেবল অপমানজনক নয়, বরং এটি ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সংবিধানের মৌলিক চেতনার উপর আঘাত।”বাংলা ভাষার মর্যাদাবাংলা ভাষা ভারতের একটি গর্বের প্রতীক। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলামের মতো মহান সাহিত্যিকদের ভাষা।
এই ভাষা কেবল পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরার মানুষেরই নয়, বরং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী বাঙালি সম্প্রদায়ের পরিচয়ের অংশ। সংবিধানের অষ্টম তফসিলে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এবং এটি কোটি কোটি মানুষের মাতৃভাষা। এই ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে উল্লেখ করা কেবল অজ্ঞতা নয়, বরং একটি ইচ্ছাকৃত অপমান বলে মনে করা হচ্ছে।
Durga Puja: হোটেল বুকিংয়ের ফাঁদে পর্যটক! ‘ফাইভ স্টার স্ক্যাম’ নিয়ে তদন্তে সাইবার পুলিশ
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই ঘটনা বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অমিত শাহ পূর্বে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
সাগরিকা ঘোষ অভিযোগ করেছেন যে, শাহের নেতৃত্বে বিজেপি ‘বিভাজন ও শাসন’ নীতি অনুসরণ করছে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করতে পারে, বিশেষ করে বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে।
এই ঘটনা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব প্রকাশ করে। সাগরিকা ঘোষের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং এটিকে বিজেপির বাঙালি-বিরোধী মনোভাবের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করছে।
এই বিতর্ক কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাঙালি সম্প্রদায় এবং তাদের ভাষার মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ এবং ক্ষমা প্রার্থনা প্রয়োজন।