শান্তনু পান, পূর্ব মেদিনীপুর: বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আচমকা রূপনারায়ণ নদীর (Rupnarayan River) বাঁধ ভেঙে পড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল ব্লকের অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। রাত প্রায় ১১টার কিছু পরেই ১০০ ফুটেরও বেশি কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা-সহ বাঁধের বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙনের শব্দ শুনে প্রথমে নদীর পাড়ে দৌড়ে আসেন কয়েকজন গ্রামবাসী। তারপর ক্রমে খবর ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামগুলিতে। চোখের সামনে নদী বাঁধ ভেঙে পড়তে দেখে আতঙ্কে অনেকে চিৎকার করে প্রশাসনকে খবর দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় প্রশাসনিক আধিকারিক ও সেচ দপ্তরের কর্মীরা।
রাতেই গ্রামবাসীরা উদ্যোগ নিয়ে ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করেন। মাটির বস্তা, বাঁশ ও বালু দিয়ে বাঁধের ধসে পড়া অংশ রোধ করার চেষ্টা চলতে থাকে। শুক্রবার সকালে সেচ দপ্তরের উদ্যোগে শুরু হয় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ। অস্থায়ীভাবে বাঁধকে রক্ষার চেষ্টা হলেও, এলাকার মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক রয়ে গিয়েছে।
অমৃতবেড়িয়া পঞ্চায়েত প্রধান জানান, “আমরা প্রশাসন ও সেচ দপ্তরকে খবর দেওয়ার পর থেকেই সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। চেষ্টা চলছে যাতে আর কোনোভাবে ভাঙন না বাড়ে। স্থায়ী বাঁধ পুনর্গঠনই এখন সবচেয়ে জরুরি।”
স্থানীয়দের বক্তব্য, এই অঞ্চলে রূপনারায়ণ নদীর ভাঙন নতুন নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ছিল, কিন্তু কোনও বড় সংস্কারমূলক কাজ হয়নি। এ বছর বর্ষার অতিবৃষ্টিতে নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের চাপ বহুগুণে বাড়ে। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে তা ভেঙে পড়ে।
ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। কংক্রিটের রাস্তার এক বড় অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ায় গ্রাম থেকে মূল রাস্তায় যাতায়াত কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপে স্থায়ী সমাধান না হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
সেচ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা এখন অস্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে কাজ করছি। পাশাপাশি স্থায়ীভাবে বাঁধ পুনর্নির্মাণের প্রকল্পও হাতে নেওয়া হবে।”
বর্তমানে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে আতঙ্কে কেউ নদীর ধারে না যান। তবে ভাঙনের পর থেকেই গ্রামবাসীরা ভয় পেয়ে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকে বলেন, “রাতে নদী ফুলে উঠলেই মনে হয়, এবার হয়তো আমাদের বাড়িটাও চলে যাবে নদীতে।”
রূপনারায়ণ নদীর এই ভয়াবহ ভাঙন আবারও প্রশাসনের নদী রক্ষার অব্যবস্থাপনার দিকে আঙুল তুলছে। স্থানীয়দের দাবি, স্থায়ী বাঁধ তৈরি না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও মারাত্মক আকার নিতে পারে।