শতবর্ষপূর্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) এবার হিন্দু জাগরণের বার্তা নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছাতে চলেছে। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, এ বছরের বিজয়া দশমী (অক্টোবর) থেকে শুরু করে আগামী বছরের বিজয়া দশমী পর্যন্ত একটানা এক বছরজুড়ে বাংলায় চালানো হবে ‘হিন্দু জাগরণ অভিযান’। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে RSS ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা নিয়েছে ২০০০-রও বেশি হিন্দু সম্মেলনের। মহালয়ার দিন থেকেই এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে।
এই বৃহৎ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য, বাংলার হিন্দু সমাজকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন করে তোলা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটানো। বাংলার পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে RSS স্বয়ংসেবকরা পৌঁছে যাবেন সরাসরি মানুষের কাছে। এই জনসংযোগ মডেলকে সংঘের তরফে বলা হচ্ছে — “প্রতি ঘর, প্রতি পাড়া, প্রতি গ্রাম”।
মহালয়ার দিন বাংলায় বিশেষ কর্মসূচি
সংঘ সূত্রে খবর, আসন্ন মহালয়ার দিন (অমাবস্যার পূর্বদিবস) বাংলার বিভিন্ন জেলায় RSS-এর স্বয়ংসেবকরা গণবেশে একত্রিত হবেন। হবে ‘পথসঞ্চালন’ — যেখানে শত শত স্বয়ংসেবক পতাকা ও ব্যান্ডসহ রাস্তায় হাঁটবেন। এর উদ্দেশ্য হিন্দু ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া ও ধর্মীয় চেতনার পুনরুদ্ধার। মহালয়ার দিন বাংলার আকাশে প্রভাতফেরির মতো করে হিন্দু জাগরণের সুর বেজে উঠবে বলে আশাবাদী সংঘ।
২০০০ হিন্দু সম্মেলনের রূপরেখা
RSS-এর এক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানিয়েছেন, “রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ২০০০ হিন্দু সম্মেলন আয়োজন করা হবে। এই সম্মেলনগুলোতে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় হবে।”
এই সম্মেলনের মাধ্যমে RSS বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে হিন্দুদের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে চায়, যেমন ধর্মান্তরণ, জিহাদি হামলা, মন্দির সংস্কার, হিন্দু পরিচয়ের রক্ষাকবচ ইত্যাদি।
২২ আগস্ট বাংলায় আসছেন দত্তাত্রেয় হোসবলে
আগামী ২২ আগস্ট রাজ্যে আসছেন সংঘের সর্বভারতীয় সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে। তাঁর সফরকে ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জানা যাচ্ছে, কলকাতা, হাওড়া, নদিয়া, বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ একাধিক জেলার RSS কার্যালয়ে বৈঠক করবেন তিনি। এই সফরে তিনি হিন্দু জাগরণ অভিযানের অগ্রগতি খতিয়ে দেখবেন এবং আগামী এক বছরের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশ দেবেন।
“প্রতি ঘর, প্রতি পাড়া, প্রতি গ্রাম” মডেল চালু
এই এক বছরের হিন্দু জাগরণ অভিযানে RSS একটি নতুন মডেল প্রয়োগ করতে চলেছে — “প্রতি ঘর, প্রতি পাড়া, প্রতি গ্রাম”। বাংলার প্রতিটি অঞ্চলে RSS-এর স্বয়ংসেবকরা গিয়ে মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চেতনা নিয়ে আলোচনা করবেন, এবং হিন্দু ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা বোঝাবেন।
এই উদ্যোগে স্থানীয় যুবসমাজকে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। হিন্দু পরিবারের মূল্যবোধ, জীবনধারা ও ঐতিহ্য নিয়ে গঠিত হবে আলোচনা চক্র, কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সংঘের ভাষ্যে উদ্দেশ্য ‘হিন্দু ঐক্য’, বিরোধীদের চোখে ‘বিভাজন’
RSS-এর তরফে বারবার জানানো হয়েছে, এই কর্মসূচির একমাত্র উদ্দেশ্য হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং বাংলা সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা।তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের মতে, RSS এই কর্মসূচির আড়ালে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে। তাদের দাবি, বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ পরম্পরাকে আঘাত করতে চায় সংঘ পরিবার। যদিও RSS-এর পালটা বক্তব্য, “বাংলায় হিন্দুরা সংখ্যায় বেশি হলেও রাজনৈতিকভাবে তারা প্রান্তিক। সমাজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতেই আমাদের এই প্রয়াস।”
সংঘের শতবর্ষে বাংলার মাটিতে বৃহৎ কৌশল
২০২৫ সালে RSS তার শতবর্ষে পা রাখবে। সেই উপলক্ষে সারা দেশের মতো বাংলাতেও সংগঠন শক্তি বাড়ানোর দিকে মন দিয়েছে সংঘ। আগামী এক বছরে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে শাখা বিস্তারের লক্ষ্য নিয়েছে সংগঠন। RSS নেতাদের মতে, “বাংলা বরাবরই হিন্দু সংস্কৃতির প্রাণভূমি। আজ সেই মাটি থেকে হিন্দুদের ঐক্য ফিরিয়ে আনাই সবচেয়ে বড় প্রয়াস।”
এই এক বছর বাংলায় RSS-এর তৎপরতা যে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে বিশ্লেষকরা একমত। হিন্দু জাগরণের এই কর্মসূচি কতটা সাড়া ফেলতে পারে, সেটাই এখন দেখার।