শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: টানা কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গে অতি বর্ষণের জেরে বিপজ্জনকভাবে জল বাড়তে শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর (West Midnapore) জেলার একাধিক নদীতে। বিশেষত চন্দ্রকোনার ভগবন্তপুর এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া শিলাবতী, কেঠিয়া ও কানা নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে। তার জেরে চন্দ্রকোনা ১ ও ২ নম্বর ব্লকজুড়ে দেখা দিয়েছে বন্যার পূর্বাভাস।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলাবতী নদীর জল হু হু করে বাড়ার ফলে পাঁচামি এলাকায় একটি বাসের চলাচলের কাঠের সাঁকো ভেঙে পড়েছে। অন্যদিকে, চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ঘোষকিরা এলাকায় অবস্থিত কানা নদীর বাঁধ আগেই দুর্বল ছিল—গত বছরের বন্যার সময় তা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে সেই বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদি বাঁধ ভেঙে যায়, তবে ঘোষকিরা গ্রামের প্রায় হাজার হাজার বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি জলের তলায় চলে যেতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা স্থানীয়দের।
এদিকে, চৈতন্যপুর, কেশাডাল, নিত্যানন্দপুর ও ঘোষকিরা সহ একাধিক এলাকায় বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকোগুলি জলের তোড়ে তলিয়ে গিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন হওয়ায় সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য বিপাকে পড়ছেন।
শিলাবতী নদীর জলস্তর লাগাতার বাড়ছে, নদীপাড় সংলগ্ন এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এরই মধ্যে রাজ্য সেচ দপ্তরের উদ্যোগে নদী বাঁধগুলি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু তা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তাই নদীর জলস্ফীতি এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ঘাটাল মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস ও চন্দ্রকোনার বিধায়ক অরূপ ধাড়া। তাঁরা চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ধর্মপোতা ও ঘোষকিরা অঞ্চলে নদী বাঁধগুলির বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। পাশাপাশি চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেন তাঁরা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এবারের বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই নদীবাঁধগুলির দুর্বলতা খতিয়ে দেখা ও দ্রুত সংস্কার করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কারণ একবার জলস্তর অতিক্রম করলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।
অন্যদিকে, আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে বর্ষা ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করেছে, এবং আরও কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জেলায় বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই।
স্থানীয় এক কৃষক বলেন, “গতবছরেই আমাদের জমি জলে ডুবে গিয়েছিল। এবার আবারও যদি নদী বাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে কিছুই বাঁচবে না।”
এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন, সেচ দপ্তর ও স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সাঁকোগুলির বিকল্প ব্যবস্থা ও জরুরি ত্রাণ প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
বন্যা মোকাবিলায় সরকার কতটা প্রস্তুত, সেটা এখন সময়ই বলবে। তবে এলাকাবাসীর প্রার্থনা—আর যেন বাঁধ না ভাঙে, আর যেন নদী না ফুলে ওঠে অতিমাত্রায়।