Veteran Politician and Seven-Time MLA Rezzak Molla Passes Away
প্রয়াত বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ রেজ্জাক মোল্লা (rezzak molla)। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, সিপিআই(এম)-এর প্রবীণ নেতা এবং সাতবারের বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা আর নেই। তিনি আজ সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি ও হৃদরোগ সহ একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তার প্রয়াণে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রেজ্জাক মোল্লার (rezzak molla) রাজনৈতিক যাত্রা
রেজ্জাক মোল্লা (rezzak molla) দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র থেকে টানা সাতবার (১৯৮৭ থেকে ২০১৬) বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সিপিআই(এম)-এর একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং দলের রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তিনি ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে ভূমি সংস্কারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং কৃষকদের জন্য নীতি গ্রহণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তবে, ২০১৬ সালে তিনি সিপিআই(এম) থেকে বহিষ্কৃত হন এবং পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। তার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর তিনি দলের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে তার মতামত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতেন। তিনি তার সরল কথাবার্তা এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য সর্বদা পরিচিত ছিলেন।
‘ভারত deserved it’—হেডলিকে বলেছিলেন রানা, মার্কিন রিপোর্টে চাঞ্চল্য
জননেতা হিসেবে অবদান
রেজ্জাক মোল্লা (rezzak molla) তার নির্বাচনী এলাকা ক্যানিং পূর্বে একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে সর্বদা তৎপর থাকতেন এবং কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। তার নেতৃত্বে ক্যানিং এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। তিনি বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের পাশে থাকার জন্য পরিচিত ছিলেন।
তার রাজনৈতিক জীবন শুধুমাত্র পদে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি সবসময় সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমতার পক্ষে কথা বলতেন। এমনকি দল পরিবর্তনের পরও তিনি তার মূল্যবোধ এবং আদর্শের প্রতি অটল ছিলেন। তার স্পষ্টবাদিতা এবং সাহসী মনোভাব তাকে রাজনীতির এক অনন্য ব্যক্তিত্ব করে তুলেছিল।
শোক প্রকাশ ও প্রতিক্রিয়া
রেজ্জাক মোল্লার প্রয়াণে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল গভীর শোক প্রকাশ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক শোকবার্তায় বলেছেন, “রেজ্জাক মোল্লার মৃত্যু আমাদের রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি একজন প্রকৃত জননেতা ছিলেন, যিনি সাধারণ মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তার অবদান আমরা কখনো ভুলব না।” তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও শোক জানিয়ে বলেছেন, “রেজ্জাকদা আমাদের মধ্যে আর নেই, কিন্তু তার আদর্শ আমাদের পথ দেখাবে।”
সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম শোক প্রকাশ করে বলেছেন, “রেজ্জাক মোল্লা আমাদের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তার প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।” কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, “রেজ্জাক মোল্লা একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার মৃত্যু রাজ্যের রাজনীতির জন্য বড় ক্ষতি।”
শেষ যাত্রা
রেজ্জাক মোল্লার মরদেহ আজ দুপুরে তার ক্যানিংয়ের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে তার অনুগামী এবং স্থানীয় মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তার পরিবারে রয়েছেন তার স্ত্রী এবং দুই পুত্র। তার বড় ছেলে রুকবানুর রহমানও তৃণমূল কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য।
রাজনৈতিক উত্তরাধিকার
রেজ্জাক মোল্লার প্রয়াণে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি যুগের অবসান হল। তিনি যে শূন্যতা রেখে গেলেন, তা পূরণ করা কঠিন। তবে, তার আদর্শ এবং জনকল্যাণের প্রতি তার নিষ্ঠা আগামী প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, একজন সমাজসেবীও ছিলেন, যিনি তার জীবন দিয়ে জনগণের সেবা করেছেন।
তার প্রয়াণে সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক নেতারা সকলেই গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ক্যানিংয়ের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “রেজ্জাকদা আমাদের অভিভাবক ছিলেন। তিনি সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য বড় ধাক্কা।” রেজ্জাক মোল্লার জীবন ও কর্ম পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।