চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে বিপুল খরচ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের (Swasthya Sathi Scheme) খরচ জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতির (Junior Doctors’ Strike) কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছে। নবান্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী,…

Record Expenses in Swasthya Sathi Scheme During Junior Doctors' Strike in West Bengal

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের (Swasthya Sathi Scheme) খরচ জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতির (Junior Doctors’ Strike) কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছে। নবান্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকা। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা করে বেশি। এই বৃদ্ধি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই সময়কালে, প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে খরচ করেছে রাজ্য সরকার।

জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রভাব
জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতির কারণে রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় রোগীদের একটি বড় অংশ বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুঁকেছিল। ফলে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে এই বেসরকারি হাসপাতালগুলির খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। নবান্ন থেকে জানা গিয়েছে, এই সময়কালে রাজ্যের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে।

   

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প: রোগীদের ভরসা
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প, যা রাজ্যের দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। এই প্রকল্পের আওতায় রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালেও বিনামূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের জন্য এক বিশাল সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। তবে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের কারণে সরকারি হাসপাতালগুলির ওপর চাপ কমাতে বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হয়েছে, যার ফলে খরচের পরিমাণও বেড়ে গিয়েছে।

খরচের বৃদ্ধি ও সরকারের উদ্বেগ
১০ই আগস্ট থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে বিশাল খরচ বেড়েছে, তা নিয়ে রাজ্য সরকারও চিন্তিত। নবান্নের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সময়কালে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের খরচের পরিমাণ প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। এই ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সরকারি কোষাগারে চাপ সৃষ্টি করেছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই খরচের পর্যালোচনা শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে কীভাবে এই ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছে।

বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকা
এই সময়কালে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে সবথেকে বেশি খরচ হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে বেসরকারি হাসপাতালগুলি রোগীদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য, তবে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সময়ে সরকারি হাসপাতালের অক্ষমতা এবং রোগীর চাপের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে এই হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছে।

স্বাস্থ্যসাথীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চলমান ব্যয়ের বৃদ্ধির কারণে রাজ্য সরকারকে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নবান্নের সূত্র অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সরকারি হাসপাতালগুলির পরিষেবা উন্নত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পর, সরকারি হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা পুনরায় স্বাভাবিক হলে এই খরচ কিছুটা কমানো সম্ভব হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকার ও চিকিৎসা পরিষেবার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক
জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবার ওপর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। আন্দোলনের কারণে সরকারের চিকিৎসা পরিষেবার ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীদের চাপ বাড়ায় সরকারি কোষাগারের ওপর যে চাপ পড়েছে, তা সামাল দিতে সরকারকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে, সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পটি রাজ্যের সাধারণ মানুষের জন্য এক অত্যন্ত সহায়ক উদ্যোগ। তবে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের কারণে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাওয়া সরকারের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে। রাজ্য সরকার বর্তমানে এই খরচ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে সবার জন্য সমান ও সুলভ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার, এবং এই লক্ষ্য পূরণে আরও নীতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হবে।