২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ফের একবার তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনে এসে রাজনৈতিক বার্তা দিতে ভুল করলেন না প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যে ‘আসল পরিবর্তন’-এর ডাক দিয়ে মোদীর স্পষ্ট মন্তব্য— “তৃণমূল সরকার গেলে তবেই বাংলায় উন্নয়ন হবে। তৃণমূলকে বিদায় জানালে তবেই এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ বদলাবে।”
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজও বাংলার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। চারপাশে দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, তোলাবাজির জাল ছড়ানো। যেখানে কেন্দ্রের দেওয়া টাকা দরিদ্র মানুষের ঘরে পৌঁছনোর কথা, সেখানে তা মাঝপথে হজম হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলের রাজত্বে বাংলার মানুষ কেবল প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, বাস্তব কিছু নয়।”
তাঁর আরও কটাক্ষ, “পাশের রাজ্য ওড়িশা, ত্রিপুরা কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপি সরকার এসেছে বলেই আজ সেই সব রাজ্যে কাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প— সবক্ষেত্রেই দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। অথচ বাংলায়? শুধু দুর্নীতি আর রাজনীতির খেলা চলছে।”
তিনি বলেন, “বাংলায় পরিবর্তনের নামে ২০১১ সালে যে সরকার এসেছিল, তারা আজ নিজেরাই পরিবর্তন ভুলে গিয়েছে। মানুষকে বোকা বানিয়ে শুধু নিজেদের পকেট ভরছে। প্রশাসনকে দলদাস বানিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। পুলিশও নিরপেক্ষ নয়। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ানক।”
প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “বাংলার মানুষ পরিবর্তনের জন্য হাঁসফাঁস করছে। সেই সুযোগ এবার বিজেপিকে দিন। একবার আমাদের আস্থা দিন, দেখুন আমরা কীভাবে বাংলা গড়ি। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি। উন্নয়ন কাকে বলে, তা বিজেপির শাসিত রাজ্যগুলি প্রমাণ করে দিয়েছে।”
তাঁর ভাষণে উঠে আসে কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও। “আমরা গরিবদের জন্য আয়ুষ্মান ভারত এনেছি, কৃষকদের জন্য কিষাণ সম্মান নিধি, মহিলাদের জন্য উজ্জ্বলা প্রকল্প। বাংলার মানুষ এর পুরোমাত্রায় সুবিধা পাচ্ছে না, কারণ রাজ্য সরকার অনেক কিছু আটকে রেখেছে রাজনৈতিক কারণে।”
এদিনের জনসভা থেকে মোদীর বক্তব্য ছিল একেবারে নির্বাচনী মেজাজে। বারবারই তিনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ‘ক্ষোভ’ এবং ‘অবসাদ’-এর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, মোদীর এই বক্তব্য স্পষ্টতই তৃণমূলকে ‘আক্রমণাত্মক’ মুডে ঘিরে রাখার কৌশল। যেভাবে ওড়িশা এবং ত্রিপুরার উদাহরণ টেনে বাংলাকে তুলনা টানলেন, তা বিজেপির পূর্ব পরিকল্পিত নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজির অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে। একইসঙ্গে, জনসাধারণকে “একবার সুযোগ দিন” বলে আর্জি জানিয়ে তিনি ভোটারদের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
তৃণমূল শিবিরের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে এই বক্তব্য যে রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াবে, তা বলাই বাহুল্য।