Santiniketan 121 Years: রাজনীতির রঙের মাঝেও এগিয়ে চলেছে রবি ঠাকুরের প্রিয় শান্তিনিকেতন

Santiniketan 121 Years: রবীন্দ্রনাথের ‘শান্তিনিকেতন’ সারা বিশ্বে পরিচিত। ‘ইংরেজি ১৯০১ সালের ২২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ মাত্র পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ‘ব্রাহ্মচর্যাশ্রম’ নাম নিয়ে নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।”…

Santiniketan

Santiniketan 121 Years: রবীন্দ্রনাথের ‘শান্তিনিকেতন’ সারা বিশ্বে পরিচিত। ‘ইংরেজি ১৯০১ সালের ২২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ মাত্র পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ‘ব্রাহ্মচর্যাশ্রম’ নাম নিয়ে নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।” তবে সে সব আজ আর নেই। রাজনীতির রঙ লেগেছে রবি ঠাকুরের প্রিয় শান্তিনিকেতনে।

১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ বোলপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রায়পুর গ্রামের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের বাড়িতে উপাসনা করতে এসেছিলেন। এ সিংহ পরিবারের জমিদার ভুবনমোহনের নামেই আজকের শান্তিনিকেতনের গা ঘেঁষে ভুবনভাঙা গ্রাম। এ গ্রামেই তৈরি হয় শান্তিনিকেতন। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ তিনি তার শান্তিনিকেতন জাতিকে দান করে দেন। দানপত্রের অন্যান্য শর্তাবলীর মধ্যে ছিল একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা। রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যালয় স্থাপনের প্রাথমিক উদ্যোগ নেন। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুতে বিদ্যালয় স্থাপন স্থগিত হয়ে যায়। তারপর বাংলা ১৩০৮ সালের ৭ পৌষ ইংরেজি ১৯০১ সালের ২২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ মাত্র পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ‘ব্রাহ্মচর্যাশ্রম’ নাম নিয়ে নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

   

রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যায়তন আশ্রমের ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে অগ্রসর হবে। তিনি বলেন, ‘ভারতবর্ষে যদি সত্যিই বিদ্যালয় স্থাপিত হয় তবে গোড়া হতেই সে বিদ্যালয় তাহার অর্থশাস্ত্র, তাহার কৃষিতত্ত্ব, তাহার স্বাস্থ্যবিদ্যা, তাহার সমস্ত ব্যবহারিক বিদ্যাকে আপন প্রতিষ্ঠা স্থানের পল্লীর মধ্যে প্রয়োগ করিয়া দেশের জীবনযাত্রার কেন্দ্রস্থান অধিকার করিবে। এই বিদ্যালয় আদর্শ চাষ করিবে, গো-পালন করিবে, কাপড় বুনিবে এবং নিজের আর্থিক সম্বল লাভের জন্য সমবায় প্রণালী অবলম্বন করিয়া ছাত্র, শিক্ষক ও চারদিকের অধিবাসীদের সঙ্গে জীবিকারযোগে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হইবে। এইরূপ আদর্শ বিদ্যালয়কে আমি ‘বিশ্বভারতী’ নাম দিবার প্রস্তাব করিয়াছি।’’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২২ সালের মে মাসে ‘বিশ্বভারতী সোসাইটি’ রেজিস্ট্রিভুক্ত সংস্থায় পরিণত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের একটি ব্যতিক্রমী বিদ্যাপীঠ। শিশু শ্রেণী থেকে পিএইচডি পর্যন্ত এখানে শিক্ষা লাভ করা যায়। এর প্রাকৃতিক শোভা, বিচিত্র বৃক্ষরাজি, ঐতিহ্যের প্রবল উপস্থিতি, প্রাণের উচ্ছ্বাস, অকৃত্রিম আতিথেয়তা মানুষকে বারবার কাছে টানে।

শান্তিনিকেতনে তথা বিশ্বভারতীর অতি যত্নে সুরক্ষিত ঐতিহ্যগুলো হলো ছাতিম তলা, বকুল বীথি, আম্রকুঞ্জ, শান্তিনিকেতন গৃহ, উপাসনা গৃহ, কাঁচমন্দির, তালধ্বজ, তিন পাহাড়, নতুন বাড়ি, দেহলী, ঘণ্টাতলা, গৌর প্রাঙ্গণ, শমীন্দ্র শিশু পাঠাগার, পূর্ব ও পশ্চিম তোরণ, সিংহ সদন, পাঠভবন, চৈতি, বেনুকুঞ্জ, চীন ভবন, হিন্দি ভবন, কেন্দ্রীয় পাঠাগার, কালোবাড়ি পান্থশালা, উত্তরায়ন, কোনার্ক, শ্যামলী, পুনশ্চ, গুহাঘর, চাম্পা লেক, উদীচী, গুরুপল্লী, রবীন্দ্র মিউজিয়াম (বিচিত্রা) ইত্যাদি।

বিখ্যাত কিছু শিল্পীর বিখ্যাত কিছু মূর্তি আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রামকিঙ্কর বেইজের ‘মায়ের কোলে সন্তান’ ভাস্কর্যটি শান্তিনিকেতন গৃহের ঠিক সামনে স্থাপিত। তার আরও দুটি কালজয়ী ভাস্কর্য ‘সাঁওতাল পরিবার’ ও সাঁওতাল রমণীদ্বয়ের স-পুত্র মিল অভিমুখে গমনকালের ‘বাঁশি’।
কবি তার মৃত্যুর কিছু দিন আগে শান্তিনিকেতন সম্পর্কে লিখেছিলেন, ”‘যখন রব না আমি মর্ত্যকায়ায়, তখন স্মরিতে যদি হয় মন, তবে তুমি এসো হেথা নিভৃত ছায়ায়, যেথা এই চৈত্রের শালবন।’

আজও বাঙালির শিক্ষা ও শিল্পচর্চার প্রধান কেন্দ্র হয়ে আছে এ প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর দেশ- বিদেশের বহু মানুষ বেড়াতে আসে এখানে।