রাজ্যের রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজনীতির (Rath Yatra Politics) আবহ ক্রমশ ঘনীভূত। একদিকে যেমন তৃণমূল কংগ্রেস রথযাত্রার মধ্যে বিজেপির ‘ধর্মীয় রাজনীতি’র গন্ধ পাচ্ছে, অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) পাশে দাঁড়ালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। বৃহস্পতিবার নিউটাউনের ইকোপার্কে সকালে হাঁটতে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “ধর্ম জাগরণের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণই তো বিজেপির লক্ষ্য। রথযাত্রা যদি সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তাহলে আপত্তি কোথায়?”
শুভেন্দুর পাল্টা রথ: দিলীপের অকুণ্ঠ সমর্থন
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কলকাতায় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠান ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য পর্যটন দফতরের তত্ত্বাবধানে রাজপথে জাঁকজমকপূর্ণ রথ উৎসবের ঘোষণা করা হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা রথযাত্রার আয়োজনের কথা বলেন। এই প্রেক্ষিতেই দিলীপ ঘোষ বলেন, “দুর্গাপুজো বা কার্নিভাল কি রাজনীতি নয়? রামনবমীর অনুষ্ঠান কি একেবারে নিরপেক্ষ? তাহলে জগন্নাথের রথযাত্রা নিয়ে এত আপত্তি কেন? বিজেপি তো একটি বিকল্প দিতেই পারে, ধর্মীয় উৎসবের নামে এই অধর্মের যুগে যদি কিছু ভক্তি-আস্তা বাড়ে, সেটা তো সমাজেরই মঙ্গল।”
রাজ্যজুড়ে রথ-রাজনীতির ঝড়
বিগত কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন করে আসছে বিজেপি। কখনও ধর্মীয় উৎসব, কখনও বা সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে এই উৎসবের ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছে গেরুয়া শিবির। এ বছর সেই রথযাত্রা ঘিরেই রাজনীতি তুঙ্গে উঠেছে। শুভেন্দুর কলকাতার ‘বিকল্প রথ’ কার্যত তৃণমূলের রথযাত্রার ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে বিজেপি নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ই যেন ফুটে উঠল।
তিনি আরও বলেন, “এই রাজ্যে সব কিছু নিয়েই রাজনীতি হয় – বিয়ে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। তাহলে রথযাত্রা বাদ যাবে কেন? এটা তো নির্ভর করে আপনি কীভাবে উৎসবটিকে দেখছেন। ভক্ত ভাববে দেবতা, পথচারি ভাববে মূর্তি, আর কেউ হাসবে— এটা তো মানসিকতার বিষয়।”
তমন্নার মা’র টাকা প্রত্যাখ্যান: কড়া ভাষায় মমতা সরকারকে কটাক্ষ
বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযোগ আনলেন দিলীপ ঘোষ। সাম্প্রতিক ঘটনায় কালীগঞ্জ ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন, “এই সরকার টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার রাজনীতি করছে। তমন্নার মা-বাবাকে আর্থিক সাহায্য দিতে চেয়েছিল প্রশাসন, কিন্তু তাঁরা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। বহু কষ্টে মেয়েটি জন্মেছিল, আজ সেই কোল খালি। সরকার কি ভাবছে, টাকা দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে? ধর্ষণের পর রেট ফিক্সড হচ্ছে! এ কোন রাজনীতি?”
তিনি যোগ করেন, “একজন বিধায়ক কালীগঞ্জে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরেছেন। এই সরকার আর কতটা নিচে নামবে? মানুষের চোখে ধুলো দেওয়া আর সম্ভব নয়। রাজ্যবাসী দেখছে, বুঝছে— পরিবর্তনের দিন খুব দূরে নয়।”
দীঘার পর এবার ‘পুরী’র প্রসাদ বিতরণে বিতর্ক
বিজেপির রথ রাজনীতির পাশাপাশি এবার উঠে এসেছে প্রসাদ বিতরণের বিষয়টিও। দিলীপ ঘোষ বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘায় যেমন রথ উপলক্ষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে, এবার রাজ্যজুড়ে পুরীর ‘মহাপ্রসাদ’ বিতরণের উদ্যোগ নিচ্ছে বিজেপি। কিন্তু সেখানেও রাজ্য সরকার বাধা দিচ্ছে। এটা ভক্তির ওপর আঘাত। দেশে প্রসাদ নিয়ে মানুষের ভক্তি-আস্তা খুব গভীর। ঘরে বসে জগন্নাথের প্রসাদ পেলে মানুষ খুশিই হবে।”
রথযাত্রা— যা মূলত ভক্তি ও ধর্মীয় উৎসবের প্রতীক, এখন রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রে। একদিকে বিজেপি এই উৎসবকে ‘ধর্ম জাগরণের’ হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরছে, অন্যদিকে তৃণমূল বলছে— “এই চক্রান্ত বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করছে।” শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষের অবস্থান বিজেপির কৌশলগত পরিকল্পনার ইঙ্গিতই দেয়। আগামী দিনে এই রথ উৎসব রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে কতটা প্রভাব ফেলবে, এখন সেদিকেই নজর রাজনীতির কারবারিদের।