SIR আবহে বিহারে মতুয়াদের রাহুল সাক্ষাৎ

মতুয়া মহাসংঘের ২৫ জন প্রতিনিধি আজ জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সঙ্গে দেখা করেন। আজ বিহারে SIR আবহে…

Rahul Gandhi meets matua

মতুয়া মহাসংঘের ২৫ জন প্রতিনিধি আজ জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সঙ্গে দেখা করেন। আজ বিহারে SIR আবহে বিশেষ করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) নিয়ে আলোচনা করতেই রাহুলের স্মরণাপন্ন হন মতুয়ারা।

এই বৈঠকের পর রাহুল গান্ধীকে পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি শিবিরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মতুয়া শিবিরে এই মুহূর্তে ভাঙনের আভাস। এই বৈঠক তারই আভাস বলে মনে করছেন অনেকে।

   

মতুয়া মহাসংঘ, যা হরিচাঁদ ঠাকুরের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৮৬০-এর দশকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে।

এই সম্প্রদায় মূলত নমশূদ্র বর্ণের, যারা পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতে আগত শরণার্থী। তাদের প্রধান দাবি হলো সিএএ-র জটিল বিধান সরলীকরণ এবং ১৯৭১-এর পর ভারতে আগত মতুয়াদের জন্য নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। এই বৈঠকে মতুয়া প্রতিনিধিরা রাহুল গান্ধীর কাছে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং তাদের সমর্থনের জন্য কংগ্রেসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন মতুয়া শিবিরের ঠান্ডা লড়াই এই ঝটিতি বৈঠকের কারণ। মতুয়া মহাসংঘের প্রভাবশালী নেত্রী রানীবালা ঠাকুরের দুই ছেলে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং সুব্রত ঠাকুরের মধ্যে সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব এবং অধিকার নিয়ে একটি ঠান্ডা লড়াই চলছে।

শান্তনু ঠাকুর, যিনি বিজেপির বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মতুয়া মহাসংঘের একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে, সুব্রত ঠাকুর তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং সম্প্রদায়ের অন্য একটি অংশের সমর্থন পাচ্ছেন। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে মতানৈক্য মতুয়া শিবিরে বিভাজনের আভাস দিয়েছে, যা রাজনৈতিক দলগুলির জন্য একটি নতুন সমীকরণ তৈরি করছে।

Advertisements

মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশ রাহুল গান্ধীর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে তাদের অধিকারের লড়াইয়ে কংগ্রেসের স্পষ্ট অবস্থানের কারণে। একজন প্রতিনিধি জানান, “রাহুলজি আমাদের সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি ঠাকুরনগরে এসে আমাদের শিবিরে অংশ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।” রাহুল গান্ধী বলেন, “মতুয়া সম্প্রদায় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের নাগরিকত্ব এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা এই বিষয়ে সংসদে এবং জনগণের মধ্যে তাদের পক্ষে কথা বলব।”

এই সাক্ষাৎকার এবং পশ্চিমবঙ্গে আমন্ত্রণ রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ মতুয়া সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৭৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে। অতীতে, মতুয়ারা কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের সমর্থক ছিলেন, কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং পরবর্তীতে বিজেপি তাদের সমর্থন পেয়েছে। শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বিজেপি ২০১৯ সালে বনগাঁ এবং রানাঘাট আসনে জয়লাভ করে, যা সিএএ পাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

“দিল্লি কি আদৌ সুরক্ষিত?”, কালকাজী-কান্ডে BJP কে তোপ কেজরিওয়ালের

তবে, সিএএ কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, যা কংগ্রেসের জন্য একটি রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে। মতুয়া শিবিরে ভাঙ্গনের প্রেক্ষাপটে সুব্রত ঠাকুরের সমর্থকরা তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেও, শান্তনু ঠাকুরের বিজেপি-নির্ভরতা নিয়ে অনেকে অসন্তুষ্ট। এই বিভাজনের সুযোগ নিয়ে কংগ্রেস মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের প্রভাব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News