সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্প কেন্দ্র করে নতুন অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ স্থানীয় আদিবাসীদের প্রতিবাদে থেমে গেছে। খনন কাজ শুরুর পরেই সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আদিবাসী মহিলারা, এবং তাঁদের প্রতিবাদের ফলস্বরূপ খনন কাজ বন্ধ করতে হয়। দেউচা পচামি এলাকায় ৩৪০০ একর জমিতে কয়লার মজুত রয়েছে এবং প্রায় ২০টি গ্রামের ২১ হাজার মানুষ এই অঞ্চলে বাস করেন। এখানে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি এবং চারণভূমি রয়েছে। খনি প্রকল্পের আওতায় শুরু হওয়া পাথর উত্তোলনের কাজেই বিক্ষোভের সূচনা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই খনন কাজের প্রথম দিনেই স্থানীয়রা, বিশেষ করে সাগরবান্দি গ্রামের আদিবাসী মহিলারা, এই কাজের বিরোধিতা করতে শুরু করেন।
আদিবাসী মহিলাদের অভিযোগ, সরকার তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। তারা বলেন, “সরকার আমাদের জমি নিয়ে আমাদের ভবিষ্যত নষ্ট করতে চায়, কিন্তু আমরা আমাদের জমি ছাড়ব না।” তাঁরা আরও বলেন, “সরকার যদি প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে, তাহলে খনি হতে দেব না। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য আমরা একত্রিত হয়ে এই প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।” এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলে শীর্ষ আধিকারিকরা পৌঁছেছেন এবং বিষয়টি আলোচনা করে মেটানোর চেষ্টা চলছে। তাঁদের মতে, এটি একটি ভুল বোঝাবুঝির ফল। এদিকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন শিল্পের জন্য জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবেনা। তাহলে দেউচা পচামির ভবিষ্যৎ কি তা নিয়ে উঠছে জল্পনা। তবে বিক্ষোভকারীরা দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থানে অটল রয়েছেন এবং প্রশাসনকে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে দেউচা পাঁচামি কয়লা খনির কাজ শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা, বিশেষত মহিলারা, এই খনন কাজের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাঁদের মতে, সরকার একদিকে ক্ষতিপূরণ ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও, প্রকল্পের বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। এখন এই খনি প্রকল্পের ভবিষ্যত অন্ধকারে। সরকার পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরেও স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ এবং ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। আদিবাসী মহিলাদের প্রতিবাদ সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এই আন্দোলন রাজ্য সরকারের খনি নীতি নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য প্রশাসন যোগাযোগ বাড়িয়েছে, কিন্তু আদিবাসীদের তরফ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জারি রয়েছে। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপের জন্য দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই বৈষম্য এবং অশান্তি কীভাবে মেটে এবং প্রকল্পের কাজ আবার চালু হয়।