আসানসোল: শ্রম কোড বাতিল, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বেসরকারিকরণ রোধ-সহ একাধিক দাবিতে ডাকা ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটে উত্তাল হয়ে উঠল পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জ, বার্ণপুর এবং আসানসোল (Asansol)। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকে এই ধর্মঘটে শ্রমিক অধ্যুষিত অঞ্চলে মিশ্র প্রভাব পড়লেও, বার্ণপুর ও আসানসোলে সংঘর্ষ, বচসা এবং আহতের ঘটনা পরিস্থিতিকে একাধিকবার উত্তপ্ত করে তোলে।
রানিগঞ্জ ও বার্ণপুর অঞ্চলে বনধ সমর্থনে রাস্তায় নামে বাম সংগঠনগুলি। বাম সংগঠনের মিছিল ও কর্মসূচির মুখোমুখি হয় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র পাল্টা মিছিল। দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বচসা এবং পরে পরিস্থিতি পৌঁছয় সংঘর্ষের কাছাকাছি। কয়েকটি জায়গায় গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন বনধ সমর্থকেরা, পাল্টা বাধা দেন তৃণমূল কর্মীরা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও এলাকাজুড়ে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়।
আসানসোলে (Asansol) ধর্মঘটের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যখন ধর্মঘটীরা সরকারি বাস ও বেসরকারি যান চলাচল বন্ধ করতে পথে নামে। সিটি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় রাস্তায় শুয়ে পড়ে ধর্মঘটকারীরা। ঠিক সেই সময় একটি ট্রাক্টর গাড়ির নিচে শুয়ে থাকা এক বাম কর্মীর উপর দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত ওই কর্মীকে দ্রুত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনায় আহত হন সিপিএমের রাজ্য কমিটির নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ও। তিনি গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখানোর সময় ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি বনধ বিরোধিতায় রাস্তায় নামে। সরকারি বাস পরিষেবা সচল রাখতে তারা সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এর ফলেই একাধিক জায়গায় বাম কর্মী ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে প্রবল বচসা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ও দুই পক্ষকে সরাতে বাধ্য হয় পুলিশ।
যদিও রাণিগঞ্জ-বার্ণপুরে উত্তেজনা থাকলেও, কয়লা খনি শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের খুব একটা প্রভাব পড়েনি। খনিতে বেশিরভাগ জায়গায় স্বাভাবিক ছিল কাজ। শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন এবং কয়লা উত্তোলনও চালু ছিল বলে সূত্রের খবর।
১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট যে রাজনৈতিক প্রভাব ফেলেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে বাম নেতৃত্বে সংগঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচি, অন্যদিকে তৃণমূলের সক্রিয় বিরোধিতা রাজ্য রাজনীতিতে দ্বিমুখী চিত্র তৈরি করেছে।
ধর্মঘটে অংশগ্রহণ এবং প্রতিবাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার গুরুত্ব যেমন রয়েছে, তেমনই সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা যে রাজ্যের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়, তাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল এই মঙ্গলবারের ধর্মঘট