বজবজ: বকেয়া মজুরির দাবিতে উত্তাল হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ। ইন্ডিয়ান অয়েলের এলপিজি বটলিং প্লান্টে (Indian Oil Plant) শ্রমিকদের বিক্ষোভ ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। বুধবার সকাল থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে বজবজের পূজালি এলাকায়। বিক্ষোভের জেরে রাস্তায় ব্যাপক যানজট এবং গ্যাস লিকের কারণে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। শেষমেশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। গ্রেফতার করা হয় প্রায় ৭০ জন বিক্ষোভকারী শ্রমিককে।
কী কারণে বিক্ষোভ?
বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে ইন্ডিয়ান অয়েলের (Indian Oil Plant) লোডিং ও আনলোডিংয়ের কাজের পারিশ্রমিক বকেয়া রয়েছে। তারা একাধিকবার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের কাছে সমস্যার কথা জানালেও কোনও সমাধান হয়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বকেয়া মেটানো নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।
কীভাবে শুরু হল উত্তেজনা?
শ্রমিকদের অভিযোগ, বৈঠকের আগে হঠাৎ করেই বহিরাগতরা তাদের উপর হামলা চালায়। এর পরই পাল্টা প্রতিরোধে নামেন শ্রমিকরা। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামে। অন্তত ১০টি মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়। এমনকি বাইকে আগুন লাগানোর চেষ্টাও হয়।
গ্যাস সিলিন্ডারের প্লাগ খুলে রাস্তার উপর ফেলা
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শ্রমিকরা রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের প্লাগ খুলে রাস্তার উপর ফেলে দেন। তাতে গোটা এলাকা গ্যাসে ভরে ওঠে। গ্যাসের ঝাঁঝে প্রথমে পিছিয়ে যায় পুলিশও। আতঙ্কে এলাকার সাধারণ মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ইন্ডিয়ান অয়েলের বটলিং প্লান্টের (Indian Oil Plant) কাছেই রয়েছে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও একটি বেসরকারি হাসপাতাল। ফলে সামান্য অসাবধানতাই বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারত।
পুলিশি অভিযান
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার রাহুল গোস্বামীর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শুরু হয় লাঠিচার্জ। দমকল বাহিনীকেও ডাকা হয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। বজবজ থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় মোট ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ পোস্ট করে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি লেখেন, ‘‘তৃণমূলের সিন্ডিকেট-সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই ঘটনা তার উজ্জ্বল উদাহরণ। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ না করে তাদের শোষণ করা হচ্ছে। এই বিক্ষোভ এবং গ্যাস লিক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারত। এলাকাবাসীর জীবন, সম্পত্তি এবং জীবিকা তৃণমূলের অপরিকল্পিত রাজনীতির কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’’
ইন্ডিয়ান অয়েলের বটলিং প্লান্ট চত্বর এবং তার আশেপাশের এলাকায় এখনও টানটান উত্তেজনা। প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি এবং প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকে নজর রাখছেন স্থানীয়রা।