বাড়তে চলেছে সম্পত্তি করের বোঝা, বিধানসভায় জোড়া বিল আনতে চলেছে রাজ্য

রাজ্যে সম্পত্তির (property) মূল্য নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু হতে চলেছে। রাজ্য (West Bengal) সরকার বিধানসভার (assembly) চলতি অধিবেশনে দুটি নতুন সংশোধনী বিল পেশ করতে যাচ্ছে,…

Property tax increase

রাজ্যে সম্পত্তির (property) মূল্য নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু হতে চলেছে। রাজ্য (West Bengal) সরকার বিধানসভার (assembly) চলতি অধিবেশনে দুটি নতুন সংশোধনী বিল পেশ করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে প্রতি বছর সম্পত্তির মূল্য ১০% হারে বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, যদি পাঁচ বছর অন্তর সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না-ও হয়, তবে আগের হিসাবের উপর ১০% করে মূল্য বাড়ানো (increase) হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, বাড়তি করের (tax) বোঝা নাগরিকদের উপর চাপবে।

রাজ্যের পুর-এলাকাগুলিতে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের জন্য ‘ভ্যালুয়েশন বোর্ড’ কাজ করে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই বোর্ডের মাধ্যমে সম্পত্তির বার্ষিক মূল্য বা ‘অ্যানুয়াল রেন্টাল ভ্যালু’ (এআরভি) নির্ধারণ করা হয়, যার ভিত্তিতে পুর কর্তৃপক্ষ সম্পত্তি কর নেন। তবে, এবার থেকে বিধানসভার সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, যদি ওই পাঁচ বছরের মধ্যে মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া শেষ না হয়, তবে আগের হিসাব অনুযায়ী ওই এআরভি ১০% বৃদ্ধি পাবে।

   

এই নতুন নিয়মের পক্ষে বলছেন প্রশাসনিক মহল, যেখানে করের বোঝা চাপানোর ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি কর বৃদ্ধি না করে, এইভাবে নিয়মের মাধ্যমে করের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। তবে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের পক্ষ থেকে এ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের দাবি, যদি বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়া করা না হয় এবং এইভাবে ১০% হারে সম্পত্তির মূল্য বাড়ানো শুরু হয়, তবে এতে সাধারণ নাগরিকদের আর্থিক সঙ্গতি বিচার না করে, দুর্নীতির পরিমাণও বাড়তে পারে।

বিধানসভায় আগামী সোমবার পেশ হতে চলেছে দুটি বিল – ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২৪’ এবং ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২৪’। এই দুটি বিলে পুর দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে সম্পত্তির বার্ষিক মূল্য নির্ধারণ করা মুশকিল হয়ে পড়ছে, বিশেষত ফাঁকা জমি বা বাড়ির ব্যবহারের ধরন বদলানোর কারণে। সেই সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারণ করা দরকার। এবং, পাঁচ বছরে প্রক্রিয়া না-হলে ১০% হারে মূল্য বৃদ্ধি করা হবে।

বাম আমলে রাজ্যে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল বেসরকারি সংস্থার হাতে, তবে তাতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীকালে, প্রবীণ কোনও আইএএস অফিসারের নেতৃত্বে ভ্যালুয়েশন বোর্ড গঠন করা হয়েছিল এবং প্রতি পাঁচ বছরে মূল্য নির্ধারণ করা হত। এআরভি ঠিক হওয়ার পর, কর দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনও অভিযোগ বা আপত্তি থাকত, তবে সেই অভিযোগ পর্যালোচনা করার জন্য একটি ‘ডিজপোজাল কমিটি’ও ছিল।

বাম আমলের পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, পাঁচ বছরে একবার ভ্যালুয়েশন বোর্ডের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত, যাতে এআরভি কখনো বাড়তে পারে আবার কমতেও পারে। তিনি মনে করেন, নির্বিচারে মূল্য বাড়ানো কোনও যুক্তিযুক্ত ব্যবস্থা নয় এবং এতে দুর্নীতির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

তবে পুর দফতরের এক কর্তার মতে, সংশোধনী বিলে এমন একটি ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পত্তি করের জন্য নিজে স্ব-মূল্যায়ন করে হিসেব জমা দিতে পারবেন।