রাজ্যের আলু (Potato) ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের (merchant strike) হুঁশিয়ারি নিয়ে রাজ্য সরকার একদিকে যেমন কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করছে। কৃষি বিপণন মন্ত্রী (minister) বেচারাম মান্না (Becharam Manna) স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কাছে ব্যবসায়ীদের দ্বারা করণীয় সব পদক্ষেপ নিতে আইনগত অধিকার রয়েছে, এবং চরম সিদ্ধান্ত নিতেও তারা পিছপা হবে না। ধর্মঘটের মুখে আলু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রাজ্য সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
রাজ্যের সীমান্ত থেকে আলু পাচার: কড়া পদক্ষেপ
এদিন মন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যের কিছু সীমান্তবর্তী জেলা থেকে অবৈধভাবে আলু পাচারের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করছে। গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে বারাবনি থানার পুলিশ ৫১০ ব্যাগ আলু আটক করেছে, যা গোপনে রাজ্য থেকে বাইরে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এই ধরনের পাচার ঠেকাতে পুলিশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আসানসোল, কুলটি এবং রূপনারায়ণপুরের চেকপোস্টেও আলুবোঝাই লরি আটকানোর ঘটনাগুলি। রাজ্য সরকার স্পষ্ট করেছে, যদি এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ না হয়, তবে আগামী দিনে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।বেচারাম মান্না এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থের জন্য রাজ্যের মানুষের ক্ষতি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আলু মজুতের পরিস্থিতি: রাজ্য সরকারের প্রস্তুতি
বর্তমানে রাজ্যের হিমঘরগুলোতে প্রায় ৭ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। রাজ্যের আলু চাহিদা ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৩.৫ থেকে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন হবে। আলু ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, অতিরিক্ত ৩ লক্ষ মেট্রিক টন আলু যদি বাইরে চলে যায়, তবে তা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। লালু মুখোপাধ্যায়, প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘হিমঘরে সংরক্ষিত আলু দিয়ে বড়জোর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যবসা চলতে পারে। তবে যদি অতিরিক্ত আলু বাইরে চলে যায়, তা হলে দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।’’
এদিকে, ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর থেকেই আলুর দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আলু পাচারের ফলে রাজ্যবাসীকে আরও বেশি দামে আলু কিনতে হতে পারে। এই পরিস্থিতি যাতে সাধারণ মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি না করে, তার জন্য রাজ্য সরকার কড়া নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।
হিমঘরে আলু সংরক্ষণের নতুন নির্দেশ:
আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের আশঙ্কায় রাজ্য সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য সরকার হিমঘরে আলু সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করে দিয়েছে। তবে, এই বাড়তি সময়ের জন্য ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে। উত্তরবঙ্গের হিমঘরগুলির জন্য ১৯ টাকা ১১ পয়সা এবং দক্ষিণবঙ্গের হিমঘরগুলির জন্য ১৮ টাকা ৬৬ পয়সা বাড়তি গুনতে হবে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের মজুতকৃত আলু বাজারে ছাড়াতে সক্ষম হবেন, তবে বাড়তি খরচের কারণে কিছুটা চাপ পড়বে তাদের উপর।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো—আলু মজুতকারী ব্যবসায়ীদের সহায়তা করা যাতে তারা বাজারে আলু ছাড়াতে সক্ষম হন এবং দাম স্থিতিশীল থাকে। তবে, যদি কোনো ব্যবসায়ী অবৈধভাবে মজুতকৃত আলু অন্য রাজ্যে পাচার করতে চায়, তবে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
রাজ্য সরকারের কঠোর মনোভাবঃ
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারবার পরিষ্কার করা হয়েছে যে, যদি রাজ্য থেকে অবৈধভাবে আলু পাচার করা হয়, তবে সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘আমরা সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে কোনো আপস করতে রাজি নই। আলু পাচার বা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এছাড়া, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেআইনি কাজকর্ম করে রাজ্যের বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করছে, কিন্তু তা তাদের জন্য একেবারেই সুবিধাজনক হবে না। রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে? রাজ্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে কি পরিস্থিতির উন্নতি হবে, না সাধারণ মানুষ আরও কষ্ট পাবে? সময়ই বলবে। তবে, রাজ্য সরকারের দৃঢ় অবস্থান এবং তৎপরতায় মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।