৬ টাকা কেজি আলু! পথে বসার জোগাড় চাষিদের, সরকার কি পদক্ষেপ করবে?

কলকাতা: রাজ্যে এবার বাম্পার আলু ফললেও, দাম পড়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজ্যের হাজার হাজার চাষি (Potato Farmer Crisis)। কোল্ড স্টোরে রাখা আলু এখন…

Potato Farmer Crisis

কলকাতা: রাজ্যে এবার বাম্পার আলু ফললেও, দাম পড়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজ্যের হাজার হাজার চাষি (Potato Farmer Crisis)। কোল্ড স্টোরে রাখা আলু এখন ৩০০–৩২০ টাকা প্রতি বস্তায় বিক্রি হচ্ছে, যা কেজি প্রতি মাত্র ৬–৭ টাকার সমান। অথচ খোলা বাজারে সেই আলুই বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা প্রতি কেজি দরে। ফলে চাষিরা দাম পাচ্ছেন না, লাভ তো দূরের কথা-খরচও উঠছে না।

চাষিদের আফশোস

চাষিরা বলছেন, মাঠ থেকে তোলার সময়েও আলুর দাম বেশি ছিল না-প্রতি বস্তায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। তবু অনেকেই আশা করেছিলেন, কোল্ড স্টোরে কিছুদিন রেখে পরে ভালো দামে বিক্রি করবেন। কিন্তু এখন সেই কোল্ড স্টোরের ‘ফ্রি বন্ড’ দামও ৩০০–৩৫০ টাকার মধ্যে, যা মাঠের দামের চেয়েও কম। অনেক চাষি আফসোস করছেন,“এর থেকে মাঠেই যদি বিক্রি করতাম, তবুও কিছুটা লাভ হতো।”

   

ধান চাষে অনিশ্চয়তা

এই সময় বহু চাষিরই ধান চাষের প্রস্তুতির জন্য টাকা দরকার পড়ে। সেই খরচ মেটাতেই তাঁরা এই সময় কোল্ড স্টোর থেকে আলু বের করে বিক্রি করেন। কিন্তু এখন বাজারের এই দরপতনে তাঁরা কার্যত অর্থ সংকটে। অনেকে বলছেন, “আমরা তো নভেম্বর–ডিসেম্বর অবধি আলু ধরে রাখতে পারি না। ধান চাষের জন্য টাকা দরকার হয়। তাই এখনই বিক্রি করতে হচ্ছে, আর সেই বিক্রিতেই সর্বনাশ হচ্ছে।”

একদিকে কম দাম, অন্যদিকে বাজারে দাম চড়া

অন্যদিকে, শহরের খোলা বাজারে আলুর দাম এখনও ১৮ থেকে ২০ টাকা প্রতি কেজি। কোথাও কোথাও আরও বেশি। কিন্তু সেই দাম চাষিরা পাচ্ছেন না, মাঝখান থেকে লাভ করে নিচ্ছেন একাংশ ব্যবসায়ী। চাষিদের অভিযোগ, “আমরা ৭ টাকায় বিক্রি করছি, অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, এটা কীভাবে সম্ভব?”

Advertisements

আলু ব্যবসায়ী ও টাস্ক ফোর্স কী বলছেন?

হুগলির তারকেশ্বরের আলু ব্যবসায়ী প্রভাত রং জানিয়েছেন, “এখনও প্রায় ৭৫ শতাংশ আলু কোল্ড স্টোরে রয়ে গিয়েছে। মাত্র ২৫ শতাংশ আলু বাজারে এসেছে। ফলে দাম আরও কমবে না বাড়বে—এটা এখনই বলা কঠিন। তবে অন্য রাজ্যে আলু পাঠানো গেলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।”

টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে স্বীকার করেছেন, “আলুর দাম পড়েছে, চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের কাছে খবর গিয়েছে। আমরা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব, তারা মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবকে জানাবেন। এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে, বেশিটাই এখনও কোল্ড স্টোরে। ফলে বাজারে চাহিদা কম, আর তাই দামও নিচে। তবে সরকার নিশ্চয় কোনও পদক্ষেপ নেবে।”

চাষিদের দাবি: হস্তক্ষেপ করুক সরকার

বর্তমান পরিস্থিতিতে চাষিরা সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, “যদি এখনও পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই বছর আলু চাষ করে অনেকেই সর্বস্বান্ত হবেন।” অনেকে বলছেন, সরকার চাহিদা অনুযায়ী অন্য রাজ্যে আলু রপ্তানির ব্যবস্থা করুক বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করুক।