কলকাতা: মহালয়ার আগেই ফের বঙ্গ সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi)। আগামীকাল, রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কলকাতায় পৌঁছবেন তিনি। একদিনের এই সফর মূলত সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক কেন্দ্রিক হলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক থেকেও তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
সূত্রের খবর, রবিবার বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। মাত্র পাঁচ মিনিট পর, অর্থাৎ ৫টা ৪০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে তিনি ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ রাজভবনে পৌঁছবেন। সেখানেই তিনি রাত্রিবাস করবেন।
এরপর সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ফোর্ট উইলিয়ামের বিজয় দুর্গে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতরে আয়োজিত কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তিনি। এরপর দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ তিনি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
প্রসঙ্গত, এই সফরের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ফোর্ট উইলিয়ামে আয়োজিত কম্বাইন্ড কমান্ডার্স কনফারেন্স। ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই কনফারেন্স। এটিই দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বৈঠক, যেখানে সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ কৌশল, সীমান্ত রণনীতি এবং নতুন দিশা নিয়ে আলোচনা হবে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর এটাই প্রথমবার, যখন এত বড় আকারে সেনা ও তিন বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব একসঙ্গে বসতে চলেছেন।
এই কনফারেন্সের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহান। তিন বাহিনীর প্রধানরা ছাড়াও থাকবেন সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা। কনফারেন্সে মূলত পূর্ব সীমান্তের কৌশল, আধুনিক যুদ্ধনীতি, প্রযুক্তি ব্যবহার, সাইবার সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান নিয়ে গভীর আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।
কলকাতার জন্য এই সফরের কৌশলগত গুরুত্বও বিশেষ। পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর ভারতীয় সেনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটি। চিন সীমান্ত থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলি এই সদর দফতরের নজরদারির আওতায়। তাই ফোর্ট উইলিয়ামে আয়োজিত এই বৈঠকে সীমান্ত কৌশল নির্ধারণ ভবিষ্যতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তার কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে রাজভবন এবং ফোর্ট উইলিয়াম পর্যন্ত গোটা পথজুড়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী ও কলকাতা পুলিশের একাধিক দল মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর রাত্রিবাস উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলও এই সফরের দিকে কৌতূহল ভরে তাকিয়ে আছে। যদিও এই সফর সম্পূর্ণ সেনাকেন্দ্রিক, তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও তা কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সীমান্ত এলাকার চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের সমস্যা নিয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজর রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, মহালয়ার আগেই কলকাতার মাটিতে প্রধানমন্ত্রীর এই ঝটিকা সফর শুধুমাত্র প্রোটোকল মেনে নয়, দেশের প্রতিরক্ষা কৌশল নির্ধারণে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় হতে চলেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।