মেট্রো চালু হাওড়া-শিয়ালদহে, সংকটে বাস-ট্যাক্সি পরিবহণ ব্যবসা

শুক্রবার হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে ধর্মতলা থেকে…

yellow taxis

শুক্রবার হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রো যাত্রা। এই রুট চালু হয়ে গেলে দেশের অন্যতম ব্যস্ততম দুই রেলস্টেশন—হাওড়া এবং শিয়ালদহ(Howrah–Sealdah Metro)—প্রথমবারের মতো সরাসরি মেট্রো সংযোগের মধ্যে আসবে। এর ফলে যাত্রীরা হাওড়া থেকে শিয়ালদহ হয়ে সোজা সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত সহজে পৌঁছে যেতে পারবেন। কিন্তু এই সুখবরেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে পরিবহণ শিল্পে। বাস, ট্যাক্সি থেকে শুরু করে বাইক ট্যাক্সি ও লঞ্চ পরিষেবা—সব ক্ষেত্রেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যাত্রী কমে যাওয়ার।

হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশন দু’টি শুধু কলকাতার নয়, সমগ্র পূর্ব ভারতের রেল যাত্রীদের অন্যতম প্রবেশদ্বার। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী এখানে নামেন এবং তাঁদের বড় অংশকেই গন্তব্যে পৌঁছতে ভরসা করতে হয় বাস বা ট্যাক্সির উপর। এতদিন পর্যন্ত হাওড়া থেকে শিয়ালদহ যেতে বাস বা ট্যাক্সিই ছিল ভরসাযোগ্য মাধ্যম। এমনকি অনেক যাত্রী হাওড়া থেকে লঞ্চে ফেয়ারলি গাটে পৌঁছে, তারপর অটো বা বাস ধরে শিয়ালদহ যেতেন। ফলে ট্যাক্সি চালক, বাস মালিক, অটোচালক, লঞ্চ কর্মী—সবাইয়ের রুটি-রুজি অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল এই যাত্রীদের উপর। কিন্তু এবার মেট্রো চালু হলে চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

   

হাওড়ার ট্যাক্সি চালক রবি শর্মা বলেন, “আমরা দিনে গড়ে তিন-চারবার হাওড়া থেকে শিয়ালদহ যাতায়াত করি। মেট্রো চালু হয়ে গেলে যাত্রীরা কম ভাড়ায় আরামদায়ক মেট্রোই বেছে নেবেন। এতে আমাদের রুজি-রুটির বড় সমস্যা হবে।” একই আশঙ্কা বাস মালিকদেরও। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “হাওড়া ময়দান থেকে যেদিন মেট্রো চালু হয়েছে, ওই রুটের বাস মালিকরা কোমায় চলে গিয়েছেন। হাওড়া থেকে বহু বাস আগে চলত। ধীরে ধীরে সব বন্ধ হয়ে যাবে।”

পরিসংখ্যান বলছে, হাওড়া এবং শিয়ালদহের মধ্যে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্যাক্সি চলাচল করে। এছাড়া হাওড়ার লাগোয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে যত বাস ও মিনিবাস চলে, তাদের সিংহভাগ যাত্রীই মূলত হাওড়া স্টেশনে নামা রেলযাত্রী। এ ছাড়া হাওড়া থেকে নিউটাউন ও সল্টলেকগামী অফিসযাত্রীদেরও বড় অংশ এতদিন ট্যাক্সির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। মেট্রো চালু হয়ে গেলে তাঁরা আর ট্যাক্সি ধরতে চাইবেন না বলেই মনে করছেন পরিবহণ মহলের সঙ্গে যুক্তরা।

শুধু ট্যাক্সি বা বাস নয়, লঞ্চ পরিষেবার উপরেও বিরূপ প্রভাব পড়বে। হাওড়া ব্রিজের যানজট এড়াতে বহু মানুষ এতদিন হাওড়া থেকে লঞ্চে ফেয়ারলি যেতেন এবং সেখান থেকে শিয়ালদহে যেতেন। মেট্রো সরাসরি হাওড়া-শিয়ালদহ সংযুক্ত করে দেওয়ায় তাঁদের অনেকেই আর লঞ্চ ধরবেন না। এতে নদীপথ পরিবহণও ধাক্কা খাবে।

Advertisements

যাত্রীদের অবশ্য মত ভিন্ন। তাঁদের একাংশ মনে করছেন, মেট্রো চালু হলে সময় ও অর্থ দু’টোই সাশ্রয় হবে। একইসঙ্গে যানজট এড়ানো যাবে এবং যাত্রা হবে অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক। অফিসগামী বা নিয়মিত ট্রেনযাত্রীদের কাছে মেট্রো তাই নিঃসন্দেহে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে চলেছে।

তবে বাস ও ট্যাক্সি মালিকরা চাইছেন সরকার যেন তাঁদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে অথবা বিকল্প রুটে গাড়ি চালানোর সুযোগ করে দেয়। না হলে হাজার হাজার পরিবহণকর্মী কাজ হারাবেন বলে তাঁদের দাবি।

সব মিলিয়ে, হাওড়া-শিয়ালদহ মেট্রোর উদ্বোধন কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থা এক নতুন যুগে প্রবেশ করালেও, এর সামাজিক-অর্থনৈতিক অভিঘাত কতটা হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।