মুর্শিদাবাদ হিংসা তদন্তে বিশেষ দল গঠনের আর্জি সুপ্রিম কোর্টে

Bengal Waqf Violence: পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদের ঘটনা সোমবার সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। এই প্রতিবাদের জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, এবং এই…

Plea in Supreme Court Seeks SIT Probe into Bengal Waqf Violence

Bengal Waqf Violence: পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদের ঘটনা সোমবার সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। এই প্রতিবাদের জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, এবং এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠনের আবেদন জানিয়েছেন শীর্ষ আদালতের আইনজীবী শশাঙ্ক শেখর ঝা। তিনি আরও দাবি করেছেন, এই তদন্ত সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত। পিটিশনে রাজ্য সরকারের কাছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দুর্বল অবস্থার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও সহিংসতা রোধে ও জীবন রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত সপ্তাহে মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা এবং হুগলি জেলায় সহিংসতার ঘটনায় ২০০-এর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু ছিল চলতি মাসে সংসদে পাস হওয়া ওয়াকফ আইনের সংশোধনী, যা নিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী দলগুলোর, বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের, মধ্যে তীব্র বাগযুদ্ধ হয়েছে। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে আগামী বুধবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর দল রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত এই সংশোধিত ওয়াকফ আইন কার্যকর হবে না। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। আমরা এই আইন সমর্থন করি না। আমাদের রাজ্যে এটি কার্যকর হবে না।” শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি জনগণের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন।

মুর্শিদাবাদে, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ, প্রতিবাদের সময় রেললাইন অবরোধ, পুলিশের উপর পাথর ছোঁড়া, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এই সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুজন ছিলেন একই পরিবারের বাবা ও ছেলে। তাঁদের দেহ সামসেরগঞ্জের জাফরাবাদে তাঁদের বাড়িতে ছুরিকাঘাতের চিহ্নসহ উদ্ধার করা হয়। তৃতীয় মৃত্যু হয়েছে ধুলিয়ানে।

প্রতিবাদের তীব্রতা বাড়তে থাকায় কলকাতা হাইকোর্ট ঘোষণা করেছে যে তারা “নীরব দর্শক” হয়ে থাকতে পারে না। আদালত কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে, যাতে রাজ্য সরকার নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করতে পারে। এছাড়া, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি হাইকোর্টে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।

এই সহিংসতা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং আগামী বছরের নির্বাচনের আগে তীব্র রাজনৈতিক প্রচারের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সোমবার এই বিতর্কের প্রাথমিক নমুনা দেখা গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুনাল ঘোষ দাবি করেছেন, এই সহিংসতার পিছনে একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর একাংশের সঙ্গে দুই-তিনটি রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্র রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা তথ্য পাচ্ছি… এটি একটি বড় ষড়যন্ত্র ছিল।”

Advertisements

এই অভিযোগের জবাবে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল বিপজ্জনক, জাতিবিরোধী এবং জিহাদি-নিয়ন্ত্রিত। আমরা এই দাঙ্গার তদন্তের জন্য এনআইএ তদন্ত চাই।” তাঁর এই বক্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে।

এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। ওয়াকফ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুধু মুর্শিদাবাদেই সীমাবদ্ধ নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের শুনানির ফলাফল এই পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এদিকে, সাধারণ মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাশায় রয়েছেন, যখন রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে ব্যস্ত।

এই সংঘাত ও সহিংসতা শুধু আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি রাজ্যের সামাজিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনেরও প্রতিফলন। আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা নির্ভর করবে আদালতের সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বশীল আচরণের উপর।