ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে পরিবহন খরচ, এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও নির্ভর করে জ্বালানির দামের ওঠানামার উপর। তাই তেলের বাজারের প্রতিটি পরিবর্তন সাধারণ মানুষের নজরে থাকে। এই প্রেক্ষিতে তেল বিপণন সংস্থাগুলি (Oil Marketing Companies – OMCs) প্রতিদিন সকাল ৬টায় নতুন দামের তালিকা প্রকাশ করে। এর ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের সর্বশেষ দামের খবর পান এবং অস্বচ্ছতার কোনো সুযোগ থাকে না।
কেন প্রতিদিন দাম বদলায়?
আগে একসময় পেট্রোল–ডিজেলের দাম কয়েক মাস অন্তর অন্তর পরিবর্তিত হতো। এতে বাজারে অনেক সময় অস্বচ্ছতা তৈরি হতো এবং বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের (Crude Oil) দাম কমলেও, সেই সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাত না। তাই ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে প্রতিদিন দাম পরিবর্তনের ব্যবস্থা চালু হয়। বর্তমানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা এবং ভারতীয় মুদ্রার (রুপি) সাথে ডলারের বিনিময় হার—এই দুই প্রধান কারণে দৈনিক দাম সংশোধন করা হয়।কলকাতায় পেট্রোলের দাম ১০৩ টাকা। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে ভারতে আমদানির খরচও বাড়ে। আবার, যদি ভারতীয় রুপি ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়, তাহলেও আমদানির খরচ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত খরচ OMCs-রা জ্বালানির খুচরো দামে প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে, তেলের দাম যদি বিশ্ববাজারে কমে, তাহলে তার সুফলও দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
প্রতিদিন সকাল ৬টার হালনাগাদ
OMCs যেমন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (IOC), ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (BPCL) এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (HPCL) প্রতিদিন ভোর ৬টায় নতুন দাম প্রকাশ করে। শহরভেদে দাম আলাদা হয় কারণ প্রতিটি রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপিত হয়। তাই দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা বা চেন্নাইয়ের দামের সাথে গ্রামের বা ছোট শহরের দামের পার্থক্য থেকে যায়।
এখন ডিজিটাল যুগে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রতিদিনের তেলের দাম জানতে পারেন। OMCs-দের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ বা এসএমএস সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতিদিন সকালেই সর্বশেষ দাম দেখা সম্ভব। যেমন, IOC গ্রাহকরা RSP <স্পেস> ডিলার কোড লিখে 9224992249 নম্বরে এসএমএস পাঠালেই তাদের এলাকার সর্বশেষ দাম জানতে পারবেন।
স্বচ্ছতা ও গ্রাহক স্বার্থ
প্রতিদিন দাম হালনাগাদ করার মূল উদ্দেশ্য হলো স্বচ্ছতা বজায় রাখা। এতে গ্রাহকেরা নিশ্চিত হন যে তাঁরা ন্যায্য দাম দিচ্ছেন। পাশাপাশি, এটি তেলের ব্যবসায় মধ্যস্থতাকারীদের অতিরিক্ত লাভ করার সুযোগও কমিয়ে দেয়।
যখন বিশ্ববাজারে দাম কমে, তখন একদিনের মধ্যে সেই সুবিধা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যায়। আগে যেভাবে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হতো, এখন আর তা হয় না। আবার দাম বাড়লেও, তা ধাপে ধাপে এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রতিফলিত হয়।
অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবন
ভারতের মতো দেশে, যেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন পরিবহনের উপর নির্ভরশীল, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়া–কমা সরাসরি তাঁদের জীবনে প্রভাব ফেলে। দাম বেড়ে গেলে পরিবহন ভাড়া বাড়ে, যার ফলে বাজারদরও চড়ে। অন্যদিকে দাম কমলে কিছুটা স্বস্তি মেলে। তাই প্রতিদিনের এই হালনাগাদ কেবল তথ্য নয়, মানুষের জীবনযাত্রার সাথেও জড়িত