বেহাল রাস্তায় মৃত্যু রোগীর, পঞ্চায়েত সদস্যকে গাছে বেঁধে বিক্ষোভ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর: দীর্ঘদিনের অবহেলিত বেহাল রাস্তাই শেষমেশ কেড়ে নিল দু’জন রোগীর প্রাণ। রাস্তার বেহাল দশার কারণে হাসপাতাল পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় পথেই মৃত্যু ঘটে…

বেহাল রাস্তায় মৃত্যু রোগীর, পঞ্চায়েত সদস্যকে গাছে বেঁধে বিক্ষোভ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর: দীর্ঘদিনের অবহেলিত বেহাল রাস্তাই শেষমেশ কেড়ে নিল দু’জন রোগীর প্রাণ। রাস্তার বেহাল দশার কারণে হাসপাতাল পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় পথেই মৃত্যু ঘটে তাঁদের। আর এই ঘটনার প্রতিবাদে রাগে ফেটে পড়ে গ্রামবাসীরা। ক্ষোভ এতটাই চরমে পৌঁছায় যে, পঞ্চায়েত সদস্যকে (BJP Leader) গাছের সঙ্গে বেঁধে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের অন্তর্গত ৯ নং লোয়াদা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁকড়া মোহনপুর এলাকায়।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে কাঁকড়া মোহনপুরের রাস্তা ভেঙে একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষার জল জমে কাদায় পরিণত হওয়ায় রোগী বা প্রবীণদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয়দের দাবি, বারবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেও কোনো সুরাহা হয়নি। রাস্তার কাজ না হওয়ায় কয়েকদিন আগেই দুই অসুস্থ ব্যক্তিকে ভাঙা রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়, তাঁদের মৃত্যু হয় পথেই।

   

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। যেদিন ঘটনাটি ঘটে, সেদিনই গ্রামে উপস্থিত হন স্থানীয় বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁকে দেখতে পেয়েই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামের মহিলারা ও স্থানীয় বাসিন্দারা। গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেন তাঁকে। মুহূর্তেই সেই ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়, সৃষ্টি হয় তীব্র চাঞ্চল্য।

এই বিষয়ে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমাদের বাচ্চা, বৃদ্ধ সবাই মিলে প্রতিদিন কষ্টে ভোগে। এতবার জানিয়েও রাস্তা সারানোর কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন আর চুপ করে বসে থাকা যায় না।”

অন্যদিকে, গাছে বাঁধা সেই বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য সাংবাদিকদের কাছে জানান, “আমি নিজের দল থেকে নির্বাচিত হলেও কাজ করতে পারছি না। পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের হাতে। তারা কাজ করতে দিচ্ছে না। বারবার জানিয়েও কোনো বরাদ্দ মেলে না। তাহলে রাস্তা সারাবে কে?”

Advertisements

এই ঘটনায় প্রশাসনের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত বিবৃতি মেলেনি। তবে পরে ডেবরা থানার পুলিশ এসে বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশবাহিনী।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত প্রশাসনের ব্যর্থতাই এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। অন্যদিকে, তৃণমূল শিবির থেকে দাবি করা হয়েছে, “এই ধরনের কাজ কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়।”

এই ঘটনার ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরের কাঁকড়া মোহনপুরে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিনের রাস্তাঘাট সমস্যাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জোরালোভাবে। প্রশাসন এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে গোটা গ্রাম।