পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাথর প্রতিমা (pathor protima) এলাকায় সোমবার রাতে একটি ভয়াবহ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে চারটি শিশু এবং দুইজন মহিলা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার। এই ঘটনায় একজন মহিলা গুরুতর আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণটি পাথর প্রতিমা ব্লকের ধোলাঘাট গ্রামে রাত ৯টা নাগাদ ঘটে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার এসপি কোটেশ্বর রাও পিটিআই-কে জানিয়েছেন (pathor protima)
সুন্দরবন পুলিশ জেলার এসপি কোটেশ্বর রাও পিটিআই-কে জানিয়েছেন, “সব মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত মহিলাকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে বাড়িটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডারে লিকেজ থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা পরে আগুনের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণে রূপ নেয়।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ধোলাঘাট গ্রামের একটি পরিবারের বাড়িতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতের খাবার তৈরির সময় হয়তো সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো একটি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই প্রচণ্ড ছিল যে আশপাশের গ্রামবাসীরা প্রথমে ভূমিকম্প হয়েছে বলে ভেবেছিলেন। ঘটনার পরপরই গ্রামের লোকজন ছুটে আসেন এবং ধ্বংসস্তূপের নীচে থাকা মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন।
পুলিশ ও দমকল বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজে হাত দেয়। কিন্তু ততক্ষণে সাতজনের মৃত্যু হয়ে গিয়েছিল। মৃতদের মধ্যে চারটি শিশু রয়েছে, যাদের বয়স ৩ থেকে ১০ বছরের মধ্যে বলে জানা গেছে। দুই মহিলা ছিলেন পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য, এবং বাকি একজন ছিলেন পরিবারের একজন পুরুষ। আহত মহিলাটি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, এবং তার অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রমেন মণ্ডল বলেন, “আমরা এমন ভয়ঙ্কর শব্দ কখনও শুনিনি। বাড়িটা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। এতগুলো প্রাণ চলে যাওয়ায় আমরা স্তম্ভিত।” আরেকজন প্রতিবেশী, শিউলি হালদার, জানান, “ওই পরিবারটি খুব সাধারণ ছিল। তারা কখনও কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায়নি। এটা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা।”
পুলিশ জানিয়েছে
পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এসপি কোটেশ্বর রাও বলেন, “আমরা সিলিন্ডারটির উৎস এবং এটি কীভাবে লিক হল তা খতিয়ে দেখছি। ফরেনসিক দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।” তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি একটি দুর্ঘটনা, তবে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে। এই ধরনের ঘটনা রোধে ভবিষ্যতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাও বিবেচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ভারতে অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে নিরাপত্তা সচেতনতা এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে, সেখানে এই ধরনের দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। বিগত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এমন ঘটনায় প্রাণহানি এবং সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলিন্ডারের নিয়মিত পরীক্ষা এবং ব্যবহারের সময় সতর্কতা এই ধরনের দুর্ঘটনা কমাতে পারে।
এই ঘটনার পর রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয়রা দাবি করছেন, শুধু ক্ষতিপূরণই নয়, এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সরকারের উচিত আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। গ্রামবাসীদের একাংশ বলেন, “আমরা চাই সরকার গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা প্রচার চালাক এবং এর সঠিক ব্যবহার শেখাক।”
বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “রাজ্যে নিরাপত্তার অভাবে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। সরকারের উচিত জনগণের নিরাপত্তার দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া।” তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জবাবে বলেন, “এটি একটি দুর্ঘটনা। আমরা পরিবারের পাশে আছি। রাজনীতি না করে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
এই ঘটনা ধোলাঘাট (pathor protima) গ্রামে একটি গভীর ক্ষত রেখে গেছে। যে পরিবারটি হারিয়েছে তাদের সদস্যদের, তাদের প্রতিবেশীরা এখনও সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আহত মহিলার সুস্থতার জন্য গ্রামবাসীরা প্রার্থনা করছেন। পুলিশ তদন্ত শেষ হলে এই বিস্ফোরণের পিছনে সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে এই দুর্ঘটনা আমাদের সবাইকে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্কতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়েছে।