শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর কারাবাসের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মুক্তির পরই তিনি দিলেন এমন এক বিস্ফোরক মন্তব্য, যা ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এল তাঁকে। প্রথমসারির এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পার্থ সরাসরি স্বীকার করে নিলেন, “হ্যাঁ, অর্পিতা আমার বান্ধবী।”
তাঁর কথায়, “আমি সদর্পে স্বীকার করছি, ও আমার বান্ধবী। যার বউ আছে, তার যদি দু’টো থাকতে পারে, আমার বউ নেই— আমার একটা বান্ধবী থাকতে পারে না?” এই বক্তব্যেই যেন তিন বছর ধরে চলা জল্পনাকে মুছে দিয়ে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় খুলে দিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী।
বিস্ফোরক বক্তব্যে পার্থ
পার্থের মন্তব্যের পর মুহূর্তে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। তিনি আরও বলেন, “এতে অসুবিধার কী আছে? আপনারা যদি শোভন-বৈশাখীকে দেখাতে পারেন, তা দেখাবেন না কেন? দলে অনেককে খুঁজে পাবেন— সৌগতদাকেও পাবেন। দিদিমণি সব জানেন। তিনি সিরিয়াল দেখেন, সিনেমা-তারকাদের খবর রাখেন— কার সঙ্গে কার সম্পর্ক, সব খবর রাখেন।”
একইসঙ্গে পার্থের মন্তব্য, তাঁকে এবং অর্পিতাকে নিয়ে যে বয়সের পার্থক্যকে ঘিরে ব্যঙ্গ হয়েছে, সেটিও তিনি নেন শান্তভাবে— “যারা আমাকে হাঁটুর বয়সি বলেছে, তাদের প্রতি সহানুভূতি হয়। কারণ তাদেরও অনেক কিছু আমি জানি। তবে অপমান করতে চাই না।”
গ্রেফতার, টাকা উদ্ধার, আর তিন বছরের নীরবতা Partha Chatterjee Arpita Relationship
২০২২ সালের জুলাই মাসে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ইডি গ্রেফতার করেছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। অর্পিতার টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি নগদ টাকা ও সোনার বার।
এরপর থেকেই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। শান্তিনিকেতনে ‘অপা’ নামে একটি বাংলো, যৌথ সম্পত্তির দলিল, অর্পিতার মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্সে পার্থর নাম ‘আঙ্কল’ হিসেবে— একে একে সব উঠে আসে তদন্তে।
তবে এত কিছুর পরও কখনও সরাসরি মুখ খোলেননি দু’জনের কেউই। আদালতে বা ভার্চুয়াল শুনানিতে কেবল একে অপরের প্রতি ‘চোখের ইশারা’ বা ‘অঙ্গভঙ্গি’ দিয়েই যোগাযোগ রাখতেন বলে দাবি সূত্রের।
অর্পিতার আগেই মুক্তি
প্রায় এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসেই জামিন পেয়েছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তারপর থেকে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। এদিকে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন পার্থ। মুক্তি পাওয়ার পর তাঁর এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি যে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের আগুন ছড়াবে, তা বলাই বাহুল্য।
পার্থের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা এই মন্তব্যে বিস্মিত। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, দুর্নীতি মামলার আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের এমন প্রকাশ “সাহসী হলেও ঝুঁকিপূর্ণ।”
অন্যদিকে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে রাজ্যের রাজনীতি ও প্রশাসনিক অঙ্গনে।


