মিলন পণ্ডা, পাঁশকুড়া: পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ধর্ষণকাণ্ড ঘিরে জেলাজুড়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অভিযুক্ত হাসপাতালের ফ্যাসিলিটি ম্যানেজার জাহির আব্বাস খান দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আরজিকরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার পর এবার পাঁশকুড়া হাসপাতালের এই অভিযোগ মানুষকে নতুন করে আতঙ্কিত করেছে। চিকিৎসা পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে যদি নারী কর্মীরা সুরক্ষিত না হন, তবে সাধারণ মানুষ কীভাবে নিশ্চিন্তে চিকিৎসা নিতে পারবেন—এমনই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।
ঘটনার প্রতিবাদে বামপন্থী সংগঠন এসইউসিআই (SUCI) বারো ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সকাল থেকেই সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। হাসপাতালের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভের পাশাপাশি ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করে তারা। তাদের মূল দাবি—অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এদিকে, ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও-ও এই আন্দোলনে সরব হয়েছে। ছাত্রনেতাদের মতে, “হাসপাতালের মতো জনস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যদি এমন নির্যাতন ঘটে, তবে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভেতর গভীর সমস্যা রয়েছে।” তাদের আরও দাবি, অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং নারী কর্মীদের জন্য আলাদা সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
পাঁশকুড়া এবং সংলগ্ন এলাকায় সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়ায়। পরিবহণ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়, সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। তবে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য মানুষের ক্ষতি করা নয়, বরং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ বিশাল বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পুলিশি তৎপরতায় দুপুরের পর ধীরে ধীরে সড়ক অবরোধ উঠে যায়। তবে এসইউসিআই জানিয়ে দিয়েছে, তাদের ঘোষিত ধর্মঘট সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত চলবে।
এই ঘটনার পর স্থানীয় মানুষ থেকে স্বাস্থ্যকর্মী—সকলের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের মতে, এ ধরনের অপরাধ রুখতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের কাছে দাবি উঠেছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে নারী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ নজরদারি বাড়াতে হবে।
বর্তমানে পাঁশকুড়ার রাজনৈতিক আবহও উত্তপ্ত। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, সরকারের গাফিলতির জন্যই রাজ্যের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একের পর এক লজ্জাজনক ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে, শাসক দল প্রশাসনিক তৎপরতার কথা তুলে ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সব মিলিয়ে, পাঁশকুড়া হাসপাতালের ধর্ষণকাণ্ড শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, গোটা রাজ্যজুড়েই গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মানুষের প্রশ্ন একটাই—এবার কি সত্যিই কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার, নাকি আবারও সময়ের সাথে সাথে চাপা পড়ে যাবে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা?