পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারের সংখ্যা দেখে হতবাক নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। আধার কর্তৃপক্ষের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে অন্তত ৪৩ লক্ষ মৃত ভোটার এখনও পর্যন্ত তালিকাভুক্ত রয়েছেন। পাশাপাশি আরও ১৩ লক্ষ নাম এমন ব্যক্তির, যাঁদের কখনও আধার কার্ড ছিল না, অথচ তাঁরা ইতিমধ্যেই মৃত বলে নিশ্চিত করা গিয়েছে।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন। আগে থেকেই স্পষ্ট করা হয়েছিল, এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে মৃত, ভুয়ো ও দ্বৈত ভোটারদের বাদ দেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আধার কর্তৃপক্ষ রাজ্যের ভোটারদের ডেটা মিলিয়ে দেখেছিল। সেই ফলেই সামনে এসেছে ভয়াবহ চিত্র বহু বছর ধরে ভোটার তালিকা সঠিকভাবে আপডেট হয়নি। আধার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যাংকের কেওয়াইসি (KYC) আপডেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য এবং নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের তালিকা ব্যবহার করে মৃত ব্যক্তিদের সনাক্ত করা হয়েছে।
একইসঙ্গে এমনও বহু নাম পাওয়া গেছে যাঁদের কোনও আধার নম্বরই ছিল না, অথচ তাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। যাচাইয়ে দেখা গেছে, তাঁদের অনেকেই আর জীবিত নন।
অন্যদিকে, কমিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৮৭ লক্ষ এনুমারেশন ফর্ম বিলি হয়েছে। তবে ৪০টি বিধানসভা কেন্দ্রে এখনও ৭৫ শতাংশেরও কম ফর্ম বিতরণ সম্পূর্ণ হয়েছে।
এই কারণে বুধবার রাতে কমিশন রাজ্যের সমস্ত ইআরও (Electoral Registration Officer)-দের নিয়ে একটি ভিডিও কনফারেন্স করে। যেসব জেলায় বিলি শেষ হয়নি, সেখানে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা চাই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ভোটার তালিকা একেবারে নির্ভুল করতে। মৃত বা ভুয়ো ভোটারদের নাম কোনওভাবেই রাখা হবে না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করছে যে ভোটার তালিকা নিয়ে এতদিন তদারকি যথেষ্ট ছিল না। আধার ও ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে প্রশাসনিক মহল “ডিজিটাল ক্লিনআপ অভিযান” বলেই দেখছে। আধার কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, তারা খুব শীঘ্রই আরও বিস্তারিত তথ্য পাঠাবে।
রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে মৃত ও ভুয়ো নাম বাদ গেলে ভোট প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ৪৩ লক্ষ মৃত ভোটারের চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক এতদিন এই মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রইল কীভাবে?


