সোনারপুর: রাজ্য জুড়ে বর্তমানে জোরকদমে চলছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নেওয়া ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ (Amader Para Amader Samadhan) কর্মসূচি। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ও সমস্যার সরাসরি সমাধান করা, যেখানে উপস্থিত থাকেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি, যেমন পঞ্চায়েত প্রধান বা পুর কাউন্সিলার। কিন্তু রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় এই কর্মসূচি ঘিরে দেখা দিল অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। অভিযোগ উঠেছে, এখানে বিরোধী দলের পাশাপাশি শাসকদলের কাউন্সিলারকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, এমনকি ক্যাম্পে যাওয়া থেকেও বিরত রাখা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ও পুর পারিষদ সদস্য সোনালি রায়ের অভিযোগ, নিজের ওয়ার্ডে কর্মসূচির ক্যাম্পে যেতে তাঁকে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘নিরাপত্তার কারণে’ নিষেধ করা হয়। সোনালি রায় বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার মোবাইল ফোনেও একাধিক হুমকির মেসেজ এসেছে। এই বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানানো হয়েছে। পুলিশ আমাকে জানিয়েছে যে আমার উপরে আক্রমণের সম্ভাবনা আছে, তাই ক্যাম্পে না যাওয়াই ভালো।”
শুধু সোনালি রায় নন, একই কর্মসূচি চলাকালীন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলার অর্চনা মিত্রও। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে পুর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ওইদিন তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং মঞ্চে ডাকা হয়নি। অর্চনা মিত্র জানান, “পুরসভার অন্যান্য আধিকারিক ও নোডাল অফিসার আমাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে নিজেদের মতো করে ক্যাম্প পরিচালনা করেছেন। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ৮৩, ৮৫ ও ৮৬ নম্বর ক্যাম্পের জন্য কী কর্মসূচি নেওয়া হলো, মানুষের সমস্যাগুলো শোনা হলো কিনা—সেই প্রক্রিয়ায় আমাকে একেবারেই সামিল করা হয়নি। আমি এ বিষয়ে পুরসভার চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।”
অন্যদিকে, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব কুমার দাস এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানান, “২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সোমবার ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন। এই ধরনের ক্যাম্প সরকারি আধিকারিকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। কাউন্সিলারকে কারা হুমকি দিয়েছে সে বিষয়ে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই।”
অর্চনা মিত্রের অভিযোগ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যানের বক্তব্য, “ওঁর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ক্যাম্পে তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন। কাউকে অপমান করার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার ঘোষিত ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি সাধারণ মানুষের সমস্যার সরাসরি সমাধান দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও দলাদলি মাঝে মাঝে এর কার্যকারিতা ব্যাহত করছে। যেখানে প্রশাসন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির যৌথ উদ্যোগে সমস্যার সমাধান হওয়ার কথা, সেখানে যদি কোনও জনপ্রতিনিধি ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ পড়েন বা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অংশ নিতে না পারেন, তাহলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তরজার সূচনা হয়েছে। বিরোধী শিবিরের দাবি, শাসক দল ইচ্ছাকৃতভাবে নির্দিষ্ট কাউন্সিলারদের প্রভাব কমাতে চাইছে। অন্যদিকে শাসক দলের বক্তব্য, প্রকল্পে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া হচ্ছে, অথচ এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক কর্মসূচি।
সবমিলিয়ে, সোনারপুরে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের ক্যাম্প ঘিরে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল প্রশাসনিক নয়—বরং রাজনৈতিক উত্তাপও বাড়িয়ে তুলেছে। আগামী দিনে এই প্রকল্প নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়, সেদিকেই এখন নজর স্থানীয়দের।