নৈহাটির বড়মা (Naihati boroma) —একটি নাম, একটি আবেগ, একটি অদ্ভুত শক্তির কেন্দ্র, যা বছরের পর বছর ধরে এই শহরের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গভীর ছাপ রেখে এসেছে। প্রতিবারের মতো এবারও বড়মার পুজো নিয়ে উৎসবের মেজাজে মাততে শুরু করেছে নৈহাটিবাসী। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেল বড়মার পুজোর প্রস্তুতি।
এই বছর কালীপুজো পড়েছে ২০ অক্টোবর, আর সেদিনই মহাসমারোহে আরাধনা হবে বড়মার। তবে তার অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতির কাজ। সোমবার, অর্থাৎ ৬ অক্টোবর, সম্পন্ন হলো কাঠামো পুজো। এই পুজো বড়মা পুজোর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নৈহাটি অরবিন্দ রোডের যে স্থানে প্রতি বছর বড়মার বিশাল আকৃতির প্রতিমা তৈরি হয়, সেখানেই আয়োজিত হয় এই কাঠামো পুজো।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, কাঠামো পুজো দিয়েই শুরু হয় বড়মার আগমনের আনুষ্ঠানিক বার্তা। এই পুজোর মাধ্যমে মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজে সম্পূর্ণভাবে হাত লাগান। প্রতিমার গঠন, রঙ, শোভা—সবকিছুতেই থাকে এক অনন্যতা। বড়মার প্রতিমা দেখতে প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। প্রতিমার উচ্চতা, চোখের দৃষ্টি, অস্ত্রসজ্জা ও রূপ-সৌন্দর্য দর্শকদের মুগ্ধ করে।
বড়মা পুজো কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ১৩ অক্টোবর থেকে পুজো নেওয়ার কাউন্টার খোলা হবে। সেই দিন থেকেই সাধারণ মানুষ বড়মার চরণে পুজো দেওয়ার বুকিং করতে পারবেন। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ নৈহাটিতে এসে বড়মার কাছে মানত করেন, পুজো দেন। কারও সন্তান লাভের মানত, কারও অসুস্থতা থেকে মুক্তির প্রার্থনা, কেউ আবার চাকরি বা ব্যবসার সাফল্যের আশায় বড়মার শরণাপন্ন হন।
কালীপুজোর সঙ্গে বড়মার পুজো অনেকটা সমান্তরাল হলেও, এখানে বড়মার পুজোর রয়েছে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য। এখানে কালীমূর্তি নয়, বড়মা রূপে এক বিশেষ মহাশক্তিকে আরাধনা করা হয়। মায়ের মুখে থাকে এক অপার মমতা, চোখে যেন জননীর আশ্বাস—সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই কারণে মায়ের প্রতিমা দর্শনে হৃদয় ভরে ওঠে এক আশ্চর্য শান্তিতে।
এবারের বড়মার থিম কী হবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত ঘোষণা না হলেও, জানা গিয়েছে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে এক বিশেষ বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রতিবারের মতো এবারও আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে কমিটি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পুজোর আয়োজন হচ্ছে যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা না ঘটে।