হেমন্তের ছোঁয়ায় বঙ্গের হাওয়ায় শীতের হাতছানি

winter-arrival-west-bengal-imd-forecast-2025

কলকাতা: গত কয়েকদিন ধরে সাইক্লোন মন্থার অবশিষ্টাংশে বাংলার আকাশে ঘনিয়ে ছিল মেঘ, ঝরঝর করে ঝরছিল বৃষ্টির ফোঁটা। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ল্যান্ডস্লাইডের ভয়, দক্ষিণবঙ্গের শহরগুলোতে জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা এসবই ছিল সাধারণ দৃশ্য। কিন্তু আজ, ৪ নভেম্বর, ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের (আইএমডি) সর্বশেষ পূর্বাভাসে স্বস্তির খবর এসেছে।

Advertisements

সাইক্লোনের প্রভাব কমে যাওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ এলাকায় শুকনো আবহাওয়া বিরাজ করবে। তবে, কিছু জায়গায় হালকা মেঘলা আকাশ এবং স্থানীয়ভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি নেমে এসেছে, যা শীতের প্রথম স্পর্শের মতো অনুভূত হচ্ছে। আইএমডির এই পূর্বাভাসে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে, বিশেষ করে কৃষক এবং শহুরে জীবনযাত্রাকারীদের।

   

এক দেশ, এক ছাত্র আইডি! শিক্ষায় ডিজিটাল বিপ্লব আনছে এনসিইআরটি

চলুন, বিস্তারিত জানি আজকের আবহাওয়ার রূপরেখা। উত্তরবঙ্গের কথা বললে, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলাগুলোতে গতকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কারণে লাল সতর্কতা ছিল। কিন্তু আইএমডির বুলেটিন অনুসারে, আজ সব জেলায় মূলত শুকনো আবহাওয়া প্রাধান্য পাবে। মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহারে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা একটা-দুটো জায়গায় থাকতে পারে, কিন্তু তা সীমিত।

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও, বৃষ্টির পরিমাণ নগণ্য। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে, যখন সর্বনিম্ন ১৮-২১ ডিগ্রি। পাহাড়ি এলাকায় কুয়াশা বা হালকা কুয়াশাচ্ছন্নতা দেখা দিতে পারে, যা ভোরবেলায় দৃশ্যমানতা কমিয়ে দিতে পারে। টি-২২ বুলেটিনে আইএমডি স্পষ্ট করে বলেছে, “উত্তরবঙ্গের সকল জেলায় মূলত শুকনো আবহাওয়া প্রাধান্য পাবে।” এই পরিবর্তন সাইক্লোনের উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ায় সম্ভব হয়েছে, যা এখন মধ্যপ্রদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

Advertisements

দক্ষিণবঙ্গের কথা উঠলে, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলোতে আজ হালকা বৃষ্টি বা বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা একটা-দুটো জায়গায় আছে। নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় স্থানীয়ভাবে মেঘলা আকাশ এবং হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে শুকনো আবহাওয়াই বেশি। কলকাতায় আজকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯-৩১ ডিগ্রি, সর্বনিম্ন ২২-২৫ ডিগ্রি থাকবে। আর্দ্রতার মাত্রা ৭৫-৮২ শতাংশের মধ্যে, যা তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক।

বাতাসের গতি দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ৭-৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। আইএমডির সপ্তাহ-দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, “দক্ষিণবঙ্গের সকল জেলায় মূলত শুকনো আবহাওয়া প্রাধান্য পাবে, তবে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।” গতকাল পর্যন্ত কলকাতার রাস্তায় জলাবদ্ধতা ছিল বড় সমস্যা, কিন্তু আজ সেই যন্ত্রণা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।এই আবহাওয়া পরিবর্তনের পেছনে সাইক্লোন মনথার দুর্বলতা প্রধান কারণ।

২৯ অক্টোবর আন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আলটিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তর-পশ্চিটি দিকে অগ্রসর হয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে আর্দ্রতা টেনে নিয়ে বাংলায় ভারী বৃষ্টি ডেকে এনেছিল। উত্তরবঙ্গে ৭-২০ সেমি বৃষ্টি, দক্ষিণে হলদে সতর্কতা এসবই ছিল সেই সময়ের ছবি। কিন্তু ১ নভেম্বর থেকে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরছে। আইএমডির কলকাতা অফিসের ডিরেক্টর মণি দেবনাথ বলেছেন, “সাইক্লোনের অবশিষ্টাংশ এখন উত্তর দিকে সরে গেছে।

আজ থেকে শুকনো আবহাওয়া ফিরে আসবে, তবে পরের দিনগুলোতে পশ্চিমা ঘূর্ণির প্রভাবে উত্তরবঙ্গে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা।” এই পূর্বাভাসে কৃষকরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। ধান কাটার সময় বৃষ্টির কারণে অনেকেরই ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু আজকের শুকনো দিনগুলোতে তারা কাজ সারতে পারবেন।শহরবাসীদের জন্যও এই খবর ভালো।