কলকাতা, ২ ডিসেম্বর: শীতের প্রথম দিনগুলোতে বাংলার আকাশ যেন একটা ধূসর পর্দা টেনে দিয়েছে(West Bengal weather)। আজ রবিবার, উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মানুষেরা ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করতে বেরিয়েছে কেউ গ্রে ট্রেঞ্চকোটে মোড়া, কেউ শাল জড়িয়ে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি) তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলেছে, আজ দিনভর শুকনো আবহাওয়া থাকবে, কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
তবে রাতের নিচের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ১-২ ডিগ্রি কম হবে, যা সকালের কুয়াশ আর দুপুরের হালকা উষ্ণতার মাঝে একটা স্বস্তির অনুভূতি দেবে। উত্তর বঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ঠান্ডা আরও তীব্র, যেখানে দার্জিলিংয়ের মতো জায়গায় সকালে শনশনে ঠান্ডা বইছে, আর দক্ষিণ বঙ্গের সমতলভূমিতে কলকাতার মতো শহরগুলোতে দিনের উষ্ণতা কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।
অনুশীলনের প্রথম দিনে চনমনে মেজাজে বাগান ফুটবলাররা
এই পূর্বাভাস শুধু আজকের নয়, সপ্তাহের প্রথমার্ধের জন্য—যা শহরবাসীদের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।আইএমডির কলকাতা আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, ২৮ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে মূলত শুকনো আবহাওয়া বিরাজ করবে। কোনো উল্লেখযোগ্য সাইক্লোনিক অ্যাকটিভিটি বা বর্ষার চিহ্ন নেই, যা গত মাসের ঘূর্ণিঝড় ‘দিতোয়াহ’-এর অবশেষের পর একটা স্বস্তির খবর।
সর্বশেষ প্রেস রিলিজে আইএমডি উল্লেখ করেছে, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে গতকাল (১ ডিসেম্বর) ডিপ ডিপ্রেশন তৈরি হয়েছে, কিন্তু এটি তামিলনাড়ু-আন্ধ্রের উপকূলে সীমাবদ্ধ থেকে বাংলার দিকে প্রভাব ফেলবে না। ফলে, আজকের আকাশ বেশিরভাগ সময় পরিষ্কার থেকে আংশিক মেঘলা থাকবে, কিন্তু বৃষ্টির কোনো আশা নেই। এই শুকনোতা কৃষকদের জন্য স্বস্তির, যারা শীতকালীন ফসলের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কিন্তু শহরের যাত্রী-পথিকদের জন্য কুয়াশের ঝুঁকি রয়েছে—বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে।
উত্তর বঙ্গের কথা বললে, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের মতো জেলাগুলোতে আজ সকালের নিচের তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘুরবে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১-২ ডিগ্রি কম। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০-২২ ডিগ্রিতে থামবে, আকাশ পরিষ্কার থাকায় দুপুরে সূর্যের আলোয় কিছুটা উষ্ণতা ফিরে আসবে। কালিম্পং বা শিলিগুড়ির মতো এলাকায় হালকা কুয়াশ দেখা দিতে পারে, যা দৃষ্টিসীমা কমিয়ে যানজনক হতে পারে।
পাহাড়ি রাস্তায় যাতায়াতকারীদের আইএমডি পরামর্শ দিয়েছে, সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করুন এবং ফগ লাইট ব্যবহার করুন। বাতাসের গতি হালকা, ৫-১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, দিক উত্তর-পূর্ব। আর্দ্রতা ৬০-৭০ শতাংশের মধ্যে থাকবে, যা ত্বক শুষ্ক করে তুলতে পারে—তাই লোশন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চা বাগানের শ্রমিকরা এই ঠান্ডায় কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে, স্থানীয় প্রশাসন তাদের জন্য গরম পোশাক বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছে।
দক্ষিণ বঙ্গে চিত্র একটু ভিন্ন, কিন্তু একই রকম শুকনো। কলকাতায় আজ সকালের তাপমাত্রা ১৬-১৭ ডিগ্রি, দিনের সর্বোচ্চ ২৬-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ আংশিক মেঘলা, কিন্তু বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। হাওড়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলোতে নিচের তাপমাত্রা ১৫-১৮ ডিগ্রি, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ২ ডিগ্রি কম। দুপুরে সূর্য উঁকি দেওয়ায় বাইরে বেরোনো স্বস্তিকর হবে, কিন্তু সন্ধ্যা হতেই ঠান্ডা বাড়বে।
বাতাসের গতি ৮-১২ কিলোমিটার, দিক পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম, যা ধুলোবালি ছড়াতে পারে—বিশেষ করে নির্মাণ কার্য চলা এলাকায়। আইএমডির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সপ্তাহের প্রথমার্ধে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই, তবে সপ্তাহের শেষে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকতে পারে। শহরের অফিসগামীদের জন্য এই আবহাওয়া আদর্শ—কিন্তু বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য ঠান্ডা লাগার সতর্কতা জারি। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ইতিমধ্যে সর্দিকাশির রোগী বাড়ছে।
