কলকাতা, ২৯ নভেম্বর: শীতের প্রথম হাওয়ায় বাংলার আকাশ মোড়া পড়েছে হালকা কুয়াশায়। উত্তর এবং দক্ষিণ বঙ্গের বেশিরভাগ জেলায় আজ শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)। তবে, সপ্তাহের শেষভাগে তাপমাত্রায় সামান্য পতনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনবে।
কলকাতায় আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে, যখন সর্বনিম্ন ১৮ ডিগ্রির নিচে নামতে পারে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় শীতের ধাক্কা বেশি, যেখানে দার্জিলিংয়ে সকালের তাপমাত্রা ৭-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। দক্ষিণবঙ্গে হাওয়া শান্ত, কিন্তু আকাশ মেঘলা থাকার কারণে দিনের বেলায়ও ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
নতুন ১০০ টাকার নোটে ছড়াল ভারত-নেপাল সীমান্ত বিতর্কের আগুন
আইএমডির পূর্বাভাস অনুসারে, আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই, তবে কুয়াশার কারণে যানজট এবং দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।আইএমডির কলকাতা আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে একটি চক্রবাতী ঘূর্ণি (সাইক্লোন ডিটওয়াহ) তৈরি হয়েছে, যা তামিলনাড়ু, পুডুচেরি এবং আন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ের সতর্কতা জারি করেছে।
কিন্তু এর প্রভাব বাংলায় সীমিত, কারণ ঘূর্ণিটি দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে, উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ারসহ সুবর্ণরেখা অঞ্চলে আজ মূলত পরিষ্কার আকাশ থাকবে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১২-১৪ ডিগ্রির মধ্যে রাখবে। দক্ষিণবঙ্গে কলকাতা, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টির কোনো চিহ্ন নেই।
আর্দ্রতা ৬৫-৭৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে, যা ত্বক শুষ্ক করে দিতে পারে। বাতাসের গতি ১০-১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে।আগামী দুই দিনে তাপমাত্রায় ১-২ ডিগ্রি পতনের সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) থেকে।
আইএমডির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালীন উত্তর-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই পরিবর্তন হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলাগুলোতে ঘন কুয়াশা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত দৃশ্যমানতা কমিয়ে দিতে পারে।
গাড়ি চালকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে কলকাতার মতো শহরগুলোতে সকালের ঠান্ডা আরও তীব্র হবে, যা ১৬-১৭ ডিগ্রিতে নেমে আসতে পারে। পরশু থেকে তাপমাত্রা আবার সামান্য বাড়বে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে শীতের ছোঁয়া লাগামহীন হয়ে উঠছে। আইএমডির সাপ্তাহিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২৭ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলায় শুষ্ক আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে, কোনো উল্লেখযোগ্য বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
এই আবহাওয়ার পরিবর্তন স্থানীয়দের জীবনে প্রভাব ফেলছে। কলকাতার রাস্তায় সকালে কুয়াশার কারণে অফিস যাওয়া-আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন অফিসকর্মী বললেন, “আজ সকালে ঠান্ডা এতো বেশি যে, গরম কাপড় না টেনে বের হওয়া যায় না। কিন্তু দুপুর হলেই গরম লাগে।” উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিকরা শীতের প্রভাবে কাজে বাধা পাচ্ছেন, যদিও শুষ্ক আবহাওয়া ফসলের জন্য ভালো।
দক্ষিণবঙ্গের কৃষকরা বারিশের অভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ শস্যের জমিতে আর্দ্রতার প্রয়োজন। আইএমডি সতর্ক করেছে, শুষ্ক আবহাওয়ায় দাহ্য রোগ বাড়তে পারে, তাই জলপান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কোনো বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়নি, কিন্তু উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকায় সতর্ক থাকুন।
