পশ্চিমবঙ্গের আকাশে গত কয়েকদিন ধরে সাইক্লোন মন্থার কালো মেঘ ঘনিয়ে ছিল, কিন্তু আজ, ৩ নভেম্বর ২০২৫, সেই ঝড়ের ছায়া কেটে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)-র সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলে এবং দক্ষিণবঙ্গের শহর-গ্রামে আজ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে আবহাওয়া স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
সাইক্লোনের অবশিষ্টাংশ থেকে উদ্ভূত লো-প্রেশার এলাকা এখন স্থানীয়করণ হয়ে যাচ্ছে, যা বৃষ্টির তীব্রতা কমিয়ে দিয়েছে। কলকাতা-কেন্দ্রিক আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ উত্তরবঙ্গে হালকা বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে পারে, যখন দক্ষিণে আংশিক মেঘলা আকাশের মধ্যে শুষ্কতা বেশি।
এই পরিবর্তন স্থানীয় কৃষক, যাত্রী এবং শহুরে জীবনকে কিছুটা স্বস্তি দেবে, কারণ গত ৭২ ঘণ্টার অবিরাম বর্ষণে বন্যা, ভূমিধস এবং ফসলের ক্ষতি হয়েছে।উত্তরবঙ্গের কথা আগে বলি। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা এই অঞ্চলগুলোতে সাইক্লোন মনথার প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। আইএমডি-র ১ নভেম্বরের বুলেটিনে উল্লেখ আছে যে, এখনও লো-প্রেশারের অবশেষ থেকে হালকা বৃষ্টি বা বজ্রপাতসহ বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে এক-দুই জায়গায়।
তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে, যা স্বাভাবিকের কাছাকাছি। আর্দ্রতার মাত্রা ৭০-৮০ শতাংশ, এবং বাতাসের গতি ১০-১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, পূর্ব-দক্ষিণ দিক থেকে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি এখনও কিছুটা রয়েছে, বিশেষ করে দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এ, কারণ মাটি এখনও ভিজে।
আইএমডি সতর্ক করেছে যে, টিস্টা, তোর্শা, রাইডাক এবং জলধাকা নদীগুলোতে জলস্তর কিছুটা বাড়তে পারে, তাই কৃষকরা সতর্ক থাকুন। গত সপ্তাহে এই অঞ্চলে ৭-২০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ফসলের ক্ষতি করেছে, কিন্তু আজ থেকে আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়ার সূচনা। সিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ির মতো শহরগুলোতে সকাল থেকে মেঘলা আকাশ থাকলেও, দুপুরের পর বৃষ্টি কমে যাবে।
দক্ষিণবঙ্গের চিত্রও অনুরূপ, কিন্তু আরও স্বস্তিকর। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদীয়া—এই এলাকাগুলোতে আজ হালকা বৃষ্টি বা বজ্রপাতের সম্ভাবনা এক-দুই জায়গায়, কিন্তু বেশিরভাগ সময় আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে। আইএমডি-র সাত দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে যে, সাইক্লোনের প্রভাব ৪ নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে কেটে যাবে, এবং আজ থেকেই শুষ্কতা শুরু হবে।
কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, আর্দ্রতা ৭৫-৮২ শতাংশ। বাতাস দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ৭-৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে, যা কোনো ঝড়ের আশঙ্কা নেই। গত কয়েকদিনে কলকাতায় স্কোয়ালি বাতাস ৩৫-৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বইছে, কিন্তু আজ তা শান্ত হবে।
বর্ধমান বা মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলোতে হালকা বৃষ্টির পর সূর্যের আভাস দেখা যাবে, যা শহুরে জীবনকে স্বাভাবিক করবে। আইএমডি জানিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে বন্যার ঝুঁকি এখন নেই, কিন্তু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকতে পারে।


