কলকাতা: অক্টোবরের শেষভাগে মন্তা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গের আকাশ যেন অশ্রুসজল হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টির ফলে উত্তর বঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ভয়, নদীতে জলস্ফীতি এবং কৃষকদের ফসলের ক্ষতি এসব খবরই শিরোনামে ঘুরছে। কিন্তু আজ, ২ নভেম্বর শনিবার, ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি) জানাচ্ছে যে, রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে বৃষ্টির তীব্রতা কমবে।
উত্তর বঙ্গে অন্তত কয়েকটি জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে, যখন দক্ষিণ বঙ্গে কলকাতা সহ অনেকাংশে শুষ্ক আবহাওয়া থাকলেও কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই পূর্বাভাস শুধুমাত্র আজকের দিনের নয়, বরং সামনের কয়েকদিনেরও, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে। আইএমডি-র কলকাতা অফিসের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, “মন্তা ঘূর্ণিঝড়ের অবশিষ্টাংশ এখনও সক্রিয়, কিন্তু এর প্রভাব কমছে। তবে সতর্কতা অবলম্বন করুন।”
মহুয়ার গড়ে জগদ্ধাত্রী ভাসানে পুলিশের লাঠিচার্জ! সরব বিজেপি
উত্তর বঙ্গের কথা আগে বলি। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের মতো জেলাগুলোতে গতকাল পর্যন্ত হেভি টু ভেরি হেভি রেইনের হলুদ এবং অরেঞ্জ অ্যালার্ট ছিল। তিস্তা, তোর্সা, রাইডাক, জলধাকা নদীগুলোতে জলস্ফীতির কারণে বন্যার ভয় দেখা দিয়েছে। কৃষকরা চা বাগান এবং ধানের ফসলের ক্ষতির জন্য চিন্তিত।
কিন্তু আজকের পূর্বাভাস অনুসারে, এই অঞ্চলে আইসোলেটেড লাইট টু মডারেট রেইন হতে পারে, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায়। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১৮-২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। আইএমডি-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট মানস রানা বলেছেন, “উত্তর বঙ্গে বায়ুবীক্ষণের কারণে বৃষ্টি এখনও চলতে পারে, কিন্তু তীব্রতা কমবে।
ভূমিধসের ঝুঁকি এখনও রয়েছে, তাই পাহাড়ি রাস্তায় সতর্কতা অবলম্বন করুন।” স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে এবং রিলিফ ক্যাম্প খুলেছে। সিলিগুড়ির একজন বাসিন্দা সুরজিৎ দাস বলছেন, “গত সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিতে বাড়ি-ঘর ভেসে গেছে। আজ অন্তত হালকা আবহাওয়া দেখে স্বস্তি হচ্ছে, কিন্তু ফসলের ক্ষতি পূরণ কে দেবে?”এদিকে, দক্ষিণ বঙ্গে পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল।
কলকাতা, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো এলাকায় আজ হালকা বৃষ্টি বা থান্ডারশাওয়ার হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ জায়গায় আংশিক মেঘলা আকাশ এবং শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখবে, যা শীতের প্রথম ছোঁয়া দেয়।
আইএমডি-র পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, “দক্ষিণ বঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে, কিন্তু বঙ্গোপসাগর থেকে আসা আর্দ্র বায়ুমণ্ডলের কারণে কোথাও কোথাও হঠাৎ বৃষ্টি হতে পারে।” কলকাতায় সকাল থেকে মেঘলা আকাশ দেখা যাচ্ছে, এবং দক্ষিণ শহরের বাসিন্দারা বাজারে বেরিয়ে পড়েছেন। ।আইএমডি-র সামগ্রিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে যে, মন্তা ঘূর্ণিঝড়ের অবশিষ্টাংশ এবং আরব সাগরের ডিপ্রেশনের প্রভাবে পুরো পূর্ব ও মধ্য ভারতে বৃষ্টির স্পেল চলছে।
বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায়ও হেভি রেইনের সতর্কতা রয়েছে। বঙ্গের ক্ষেত্রে, ৩ নভেম্বর রবিবার থেকে আবহাওয়া আরও স্থিতিশীল হবে, এবং ৪ নভেম্বর নাগাদ সম্পূর্ণ শুষ্ক হয়ে যাবে। তবে, নভেম্বর মাসের মাসিক আউটলুক অনুসারে, রাজ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা থাকবে, যা শীতকালের শুরুতে স্বাগত। আইএমডি-র ডিরেক্টর জেনারেল মৃদুল গোয়েল বলেছেন, “আমরা রেডার এবং স্যাটেলাইট ডেটা নিরীক্ষণ করে সতর্কতা জারি করছি। জনগণকে অ্যালার্ট অ্যাপ ফলো করতে বলছি।”


