বাতাসে ঠান্ডার আমেজ নিয়ে কেমন থাকবে বঙ্গের আবহাওয়া

west-bengal-weather-forecast-autumn-temperature

কলকাতা: শরৎকালের মনোরম আবহাওয়ায় ঢেকে-ঢাকা আকাশের নীচে বঙ্গভূমি আজ একটু বেশি উষ্ণতায় কাটিয়ে উঠছে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের (আইএমডি) সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, উত্তর বঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গ উভয় অঞ্চলেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি উপরে রয়েছে।

Advertisements

দক্ষিণ বঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বিচিত্র আবহাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যেখানে উত্তর বঙ্গের উত্তরাঞ্চলে হালকা বৃষ্টি বা বজ্রঝড়ের ছিটেফোঁটাও মেঘ করতে পারে। এই আবহাওয়া পরিবর্তনের মধ্যে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে, তা নিয়ে আলিপুরের আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা সকাল থেকেই সতর্কবাণী জারি করেছেন। চলুন, বিস্তারিত জেনে নিই আজকের এই আকাশের খবর।

প্রথমেই বলি দক্ষিণ বঙ্গের কথা। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা—এই সব জেলায় আজ আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার থেকে আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। আইএমডির সাপ্তাহিক পূর্বাভাসে (১৭-২৩ অক্টোবর) বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘুরপাক খাবে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি বেশি।

সকালে তাপমাত্রা শুরু হবে ২২-২৪ ডিগ্রি থেকে, দুপুরের দিকে উঠে যাবে ৩৩ ডিগ্রি অবধি, আর রাতে নেমে আসবে ২১-২৩ ডিগ্রির কাছাকাছি। এই উষ্ণতা কারণে কলকাতার রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে ঘামে ভিজে যাওয়া স্বাভাবিক, বিশেষ করে যারা অফিস-বাজারের যাতায়াত করেন। আর্দ্রতার মাত্রা ৬৫-৭৫ শতাংশের মধ্যে থাকায়, বাতাসটা একটু ভারী লাগতে পারে, কিন্তু মনসুনের মতো অস্বস্তিকর নয়।

বাতাসের গতি দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বইবে, যা খুব একটা অস্বস্তি দেবে না।তবে, উপকূলীয় এলাকায়—যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনা বা পূর্ব মেদিনীপুরে—হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমডি বলছে, সপ্তাহের প্রথমার্ধে (যার মধ্যে আজ অন্তর্ভুক্ত) এক-দুই দিন উপকূলীয় জেলায় বিচিত্র বৃষ্টিপাত বা বজ্রঝড় হতে পারে।

এর পরিমাণ সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের নীচে থাকলেও, সকাল বা বিকেলে হঠাৎ মেঘ জমে পড়লে ছাতা-ছিটার প্রয়োজন হতে পারে। কলকাতায় বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে, যেমন গড়হাট বা জোড়াসাঁকোর দিকে, বিকেলের পর বজ্রপাতের সঙ্গে হালকা বর্ষণ হলে রাস্তায় জল জমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই সময় বাইরে থাকা মানুষদের জন্য আইএমডি হলুদ সতর্কতা জারি করেছে অর্থাৎ, সতর্ক থাকুন, কিন্তু প্যানিক করবেন না।

Advertisements

বজ্রপাতের ঝুঁকি কমাতে গাছতলায় বা খোলা জায়গায় না দাঁড়িয়ে ভিতরে চলে যাওয়াই ভালো। কৃষকদের জন্য এই হালকা বৃষ্টি ধানের শেষ ফসলের জন্য কিছুটা উপকারী হতে পারে, কিন্তু বেশি হলে জমিতে জল জমে যাওয়ার ভয় রয়েছে।এবার উত্তর বঙ্গের দিকে চলে আসি। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর এই হিমালয়ীয় পাদদেশ থেকে গঙ্গা সংলগ্ন এলাকায় আজ আবহাওয়া একটু ভিন্ন ছবি আঁকছে।

এখানেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে, সর্বোচ্চ ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৯-২১ ডিগ্রি। দার্জিলিংয়ের মতো উঁচু জায়গায় সকালে কুয়াশার আবির্ভাব হতে পারে, যা দৃষ্টিসীমা কমিয়ে ট্রাফিককে প্রভাবিত করবে। উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে আলিপুরদুয়ার বা জলপাইগুড়ির দিকে, হালকা বৃষ্টি বা বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা সপ্তাহের প্রথম দিকে দেখা দিতে পারে।

আইএমডির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গের উত্তর অংশে এক-দুই দিন এমন ঘটনা ঘটতে পারে, যদিও সামগ্রিক বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকবে। আর্দ্রতা ৭০-৮০ শতাংশ, বাতাস উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ৮-১২ কিমি বেগে বইবে। এখানকার চায়ের বাগানের শ্রমিকরা এই উষ্ণতায় একটু কষ্ট পাবেন, কারণ সূর্যের তাপে পাতা শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, হালকা বৃষ্টি এলে তা কিছুটা স্বস্তি দেবে।

পর্যটকদের জন্য দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেন যাত্রা আজ মজাদার হতে পারে, কিন্তু কুয়াশায় রাস্তায় সতর্কতা অবলম্বন করুন।আইএমডির এই পূর্বাভাস কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, শরৎকালে বাংলার আবহাওয়া প্রায়শই অপ্রত্যাশিত হয়ে ওঠে। মনসুন প্রস্থানের পরও বঙ্গোপসাগর থেকে আসা নিম্নচাপের প্রভাবে হঠাৎ বৃষ্টি চলতে পারে।

আজকের এই সতর্কতা মূলত উপকূলীয় ও উত্তরাঞ্চলের জন্য, যেখানে বজ্রপাত বা হালকা বর্ষণের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা হতে পারে। রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগও এই পূর্বাভাসের ভিত্তিতে সক্রিয় হয়েছে। কলকাতায় বাস-ট্রামের যাত্রীদের জন্য বিকেলের পর ছাতা সঙ্গে রাখা উচিত, আর উত্তর বঙ্গের গ্রামীণ এলাকায় নদী-পুকুরের তীরে থাকা লোকজন সতর্ক থাকুন। স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে, এই আর্দ্র উষ্ণতায় শ্বাসকষ্টের রোগীদের অস্বস্তি বাড়তে পারে, তাই বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।